গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে এটি সহজেই চোখে পড়ে। আগাছার মতো আপনাআপনি বেড়ে ওঠা এই শাকটির নাম বথুয়া। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এর দেখা মেলে। স্থানীয়ভাবে এটি বাইথ্যা শাক, বেথে শাক, ভাইত্যা শাক বা ভেতে শাক নামেও পরিচিত। কেউ বিশেষভাবে চাষ না করলেও, এটি জমির উর্বর মাটিতে অযত্নেই বেড়ে ওঠে।
বথুয়া শাক দামে অত্যন্ত সস্তা হলেও, এর পুষ্টিগুণ কোনো অংশে কম নয়। প্রায় ২-৩ ফুট উচ্চতার এই বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদের পাতা ফ্যাকাসে সবুজ রঙের হয়। এর কাণ্ডে উঁচু শিরা ও বেগুনি রঙের রেখা দেখা যায়। পাতার উপর মোমের মতো একটি আস্তরণ থাকার কারণে এতে জল জমে না। পাতার নিচের দিকেও সাদাটে একটি আবরণ থাকে। এই শাকে ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ও জিঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আটটি অ্যামাইনো অ্যাসিড ভরপুর মাত্রায় বিদ্যমান।
বথুয়া শাক কেবল খাদ্য হিসেবেই মূল্যবান নয়, বরং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি বহু ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। হজমশক্তি বাড়াতে, খিদে বৃদ্ধি করতে এবং পেট ব্যথা কমাতে এই শাক অত্যন্ত কার্যকর।
কিডনিতে পাথর হলে বথুয়া শাকের জুস বিশেষভাবে উপকারী। এর জন্য এক গ্লাস জলে বথুয়া শাক ও এক চা চামচ চিনি মিশিয়ে শরবত তৈরি করে টানা দশ দিন খেতে হবে। নিয়মিত এই শরবত পান করলে কিডনিতে জমে থাকা পাথর গলতে শুরু করে।
ত্বকের শ্বেত রোগের চিকিৎসায় বথুয়া শাক দারুণ কাজ দেয়। চার কাপ বথুয়া শাক এক কাপ তিলের তেলের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে যখন এক কাপ পরিমাণে দাঁড়াবে, তখন সেটি প্রতিদিন একবার ক্ষত স্থানে মালিশ করতে হবে। তবে এই রোগ পুরোপুরি নিরাময় হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। গরম জল বা আগুনে ত্বক ঝলসে গেলে, ওই স্থানে বথুয়া শাক বেটে লাগিয়ে রাখলে জ্বালা-পোড়া দ্রুত কমে যায়।
এছাড়াও, প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া করলে আধা কেজি বথুয়া শাক বেটে তিন গ্লাস জলে শরবত তৈরি করে ছেঁকে নিন। এরপর এতে তিন চা চামচ জিরা গুঁড়া ও তিন চা চামচ লেবুর রস মেশান। দিনে তিনবার কয়েক দিন এই শরবত খেলে প্রস্রাবের জ্বালা পোড়ার সমস্যা দূর হয়ে যায়। বথুয়া শাক লিভার, পিত্ত এবং মলাশয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়েও সহায়ক। এমনকি মুখে ঘা হলে বথুয়া শাক চিবিয়ে খেলে বা রান্না করে খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
সুতরাং, আপাতদৃষ্টিতে আগাছা মনে হলেও বথুয়া শাক আসলে একটি অত্যন্ত উপকারী উদ্ভিদ। দামে সস্তা এবং সহজলভ্য হওয়ায় এটি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই এই অবহেলিত শাকটির গুণাগুণ সম্পর্কে জানা এবং এটিকে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ।