হিং, যা আসাফোয়েটিডা নামেও পরিচিত, একটি প্রাচীন খাবার এবং ভেষজ উপাদান। ভারতীয় উপমহাদেশে এটি বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম থাকলেও ‘হিং’ নামেই এটি বেশি পরিচিত। ফেরুলা গোত্রের উদ্ভিদের মূল থেকে সংগৃহীত এই মসলাটি ভারত ও নেপালের মতো দেশগুলোতে চিকিৎসার উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এটি একটি শক্তিশালী হার্বাল, যা স্বাস্থ্যের জন্য বহুবিধ উপকার বয়ে আনে।
হয়তো অনেকেই এই মসলার গুণাগুণ সম্পর্কে অবগত নন। চলুন, আজ জেনে নেওয়া যাক হিং-এর কিছু চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা:
প্রাচীনকালে নারীরা গর্ভধারণের তথ্য জানার জন্য জলের সাথে হিংয়ের গুঁড়ো মিশিয়ে খেতেন। এছাড়াও, হজমের সমস্যা দূর করতেও এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হিংয়ের পেস্ট তৈরি করে বুক ও নাকের নিচে মাখা হতো, যা সর্দি ও ফ্লু নিরাময়ে সহায়ক। অ্যাজমার উপশমেও এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতো।
আয়ুর্বেদে হিং একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। হজমের যেকোনো সমস্যা তাড়াতে হিংকে শক্তিশালী সমাধান হিসেবে গণ্য করা হয়। হিং জলে সেদ্ধ করে পেস্ট তৈরি করে পেটের ওপর লাগালে অনেক সমস্যার উপশম মেলে।
প্রতিদিন হালকা গরম জলের সাথে হিংয়ের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে নিম্নলিখিত উপকারিতাগুলো পাওয়া যায়:
১. হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি দূর করে: হিংয়ের জলে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায় এটি হজমের সমস্যা এবং অ্যাসিডিটির মতো পেটের গোলমাল দ্রুত নিরাময় করে।
২. রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: নিয়মিত হিংয়ের জল পান করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
৩. ব্লাডার ও কিডনি পরিষ্কার রাখে: হিং জলে গরম করলে পরিশোধক উপাদান তৈরি হয়, যা ব্লাডার ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। এটি মূত্রথলির সংক্রমণ রোধেও দারুণ কার্যকর।
৪. হাড় মজবুত করে: প্রতিদিন হিংয়ের জল পান করলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং এটি মজবুত হয়।
৫. অ্যাজমার উপশমে সহায়ক: হিংয়ে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি অ্যাজমার সমস্যায় দারুণ উপকার দেয়।
৬. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: হিং বেটা ক্যারোটিনের একটি ভালো উৎস, যা চোখের যত্ন নেয়, চোখ শুষ্ক হতে বাধা দেয় এবং সামগ্রিকভাবে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৭. রক্তস্বল্পতা ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: হিংয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক উপাদান বিদ্যমান, যা দেহে রক্তস্বল্পতা হতে বাধা দেয় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি দাঁতকেও মজবুত করে।
সুতরাং, হিং শুধু একটি মসলাই নয়, এটি একটি শক্তিশালী ভেষজও বটে। এর অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা এটিকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য করে তুলতে পারে।