অনেকেই বলে থাকেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং যুক্তি দেওয়ার সক্ষমতাও কমে আসে। তবে আশার কথা হলো, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিছু মানসিক চর্চা ও কৌশলের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে পুনরায় শাণিত করা যেতে পারে। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন থেকে সেই কৌশলগুলো তুলে ধরা হলো:
১. ব্যায়াম: এটা প্রমাণিত সত্য যে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে। ব্যায়ামের কারণে মস্তিষ্কের সাইন্যাপসিস (যে অংশে দুটি কোষের নিউরনের মধ্যে স্নায়বিক বৈদ্যুতিক স্পন্দন আদান-প্রদান ঘটে) বৃদ্ধি পায়। ফলে মস্তিষ্কে আরও বেশি যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং অতিরিক্ত কোষ গঠিত হয়। হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকার অর্থ হলো আপনি আরও বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারবেন এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারবেন। বাসার বাইরে বা খোলা জায়গায় শরীরচর্চা করলে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি শোষণ করা যায়, যা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। ব্যায়ামের সময় নতুন কোনো পরিবেশ ঘুরে দেখলে অন্যদের সঙ্গে মতামত বিনিময় এবং নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়, যা মস্তিষ্কের নতুন কোষগুলোর জন্য একটি সার্কিট তৈরি করতে সাহায্য করে।
২. চলতি পথে মুখস্থ করা: চলতি পথে মুখস্থ করার অভ্যাস বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত এবং অভিনেতারাও এটি চর্চা করেন। বলা হয়, চলার পথে নতুন কোনো শব্দ বা নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করলে তা বেশি মনে থাকে। ভবিষ্যতে কোনো প্রেজেন্টেশন বা বক্তব্য দেওয়ার থাকলে হাঁটতে হাঁটতে সেটি পড়ে দেখতে পারেন। এমনকি মস্তিষ্ককে মনে রাখতে সাহায্য করতে নাচানাচিও করে দেখতে পারেন।
৩. সঠিক খাবার খান: আপনি যে পরিমাণ শক্তি ও গ্লুকোজ গ্রহণ করেন, তার ২০ শতাংশ সরাসরি মস্তিষ্কে যায়। তাই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা দেহের গ্লুকোজের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল। দেহের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মন ও মস্তিষ্ক ঝাপসা মনে হতে পারে। পছন্দের খাবার খেলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক রাসায়নিক নির্গত হয়, যা খাওয়ার সময় শান্তি এনে দেয়। তবে শুধু মস্তিষ্কের ক্ষুধাই নয়, পেটের ক্ষুধাও মেটানো দরকার। কারণ পেটকে ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ বলা হয়। স্বাস্থ্যকর ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার অণুজীবের মাত্রা ঠিক রাখে এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। মস্তিষ্কের কোষ চর্বি দিয়ে গঠিত, তাই খাবার থেকে চর্বি একেবারে বাদ দেওয়া ঠিক নয়। বিভিন্ন বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, মাছ, রোজমেরি ও হলুদ থেকে প্রাপ্ত ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভালো। একা না খেয়ে অনেকের সঙ্গে মিলে খাওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ সামাজিকীকরণ মস্তিষ্কে স্বাস্থ্যকর খাবারের সুফল বাড়িয়ে দেয়।
৪. বিরতি নিন: কিছু চাপ বা স্ট্রেস দরকারি, কারণ এটি জরুরি অবস্থায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্য করে। এটি কর্টিসল নামক হরমোনের নিঃসরণকে সহায়তা করে, যা সাময়িকভাবে উজ্জীবিত করে এবং মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। তাই সময় মতো বিরতি নেওয়া এবং মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়া জরুরি। সবকিছু থেকে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিরতি নেওয়ার অর্থ হলো, আপনি মস্তিষ্কের ভিন্ন একটি অংশ ব্যবহার করছেন। মস্তিষ্কে স্বাভাবিকভাবে একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক থাকে, যার কাজ হলো মানুষকে কল্পনা করার ক্ষমতা বা দিবা স্বপ্ন দেখার সক্ষমতা দেওয়া। স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিরতি নেওয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের এই অংশ সক্রিয় হয় এবং কাজ করার সুযোগ পায়। মস্তিষ্ক শান্ত করা কঠিন মনে হলে, ধ্যান করার মতো পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখতে পারেন। ধ্যান স্ট্রেস হরমোনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।
৫. নতুন চ্যালেঞ্জ নিন: মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানোর একটি ভালো উপায় হলো একে কোনো চ্যালেঞ্জ দেওয়া, যেমন নতুন কিছু শেখা। আর্ট ক্লাসে অংশ নেওয়া বা নতুন কোনো ভাষা শেখার মতো কাজ মস্তিষ্কের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে কোনো গেম বা চ্যালেঞ্জ শুরু করতে পারেন। এটি শুধু আপনার জন্য চ্যালেঞ্জই হবে না, অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া বাড়াবে, যা মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৬. গান শুনুন: সঙ্গীত মস্তিষ্ককে অসাধারণ উপায়ে উদ্দীপিত করে। গান শোনার সময় বা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময় মস্তিষ্কের চিত্র দেখলে দেখা যায় মস্তিষ্কের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গান সাধারণ বোধশক্তি ও স্মৃতিকে শক্তিশালী করে। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীরাও সবার শেষে গান ভোলে। তাই নিজে গান করুন বা গান শুনুন।
৭. পড়া এবং ঘুম: দিনের বেলায় নতুন কিছু পড়লে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যে এক ধরনের সংযোগ স্থাপিত হয়। আর ঘুমালে ওই সংযোগ শক্তিশালী হয় এবং শেখা জিনিস স্মৃতিতে পরিণত হয়। তাই স্মৃতির জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।