সুস্থ জীবনযাপনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের শরীরের কখন কী প্রয়োজন, সেই বিষয়ে সঠিক তথ্য একমাত্র তারাই দিতে পারেন। তাদের সাহায্যেই আমরা সুস্থ ও নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করতে পারি। চলমান মহামারি মোকাবিলায় চিকিৎসকেরাই ছিলেন সম্মুখসারির যোদ্ধা। তবে এমন অনেকেই আছেন, যারা চিকিৎসকের কাছে গিয়েও নিজেদের সমস্যার কথা খুলে বলতে দ্বিধা বোধ করেন। মনে রাখবেন, আপনি যদি আপনার সমস্যার কথা স্পষ্ট করে না বলেন, তাহলে চিকিৎসকের পক্ষে আপনাকে সাহায্য করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ আপনার শারীরিক পরিস্থিতি আপনিই সবচেয়ে ভালো অনুভব করতে পারবেন। এমন কিছু সমস্যা রয়েছে, যা কখনোই চিকিৎসকের কাছে গোপন করা উচিত নয়। চলুন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
১. পেট ব্যথা ও ফোলা ভাব:
পেটে একটানা ব্যথা বা পেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পেট ফোলা কেবল খাবার হজমের সমস্যা নয়, বরং গ্যাস্ট্রিক, অ্যালার্জি বা আলসারের মতো মারাত্মক রোগের লক্ষণও হতে পারে। পেট ব্যথার সঙ্গে বমি, ডায়েরিয়া বা ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানান।
২. হঠাৎ শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া:
হঠাৎ করে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। অনেকে ঠান্ডা লাগা বা কানে ময়লা জমার কারণ মনে করলেও, এর পেছনের কারণ আরও গভীর হতে পারে। অডিটরি নার্ভে টিউমার বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের লক্ষণও হতে পারে এটি। তাই এই সমস্যা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান এবং বিস্তারিত জানান।
৩. তীব্র মাথা ব্যথা:
মাথা ব্যথাকে অনেকেই সাধারণ বিষয় হিসেবে ধরে নেন এবং গুরুত্ব দিতে চান না। তবে যদি আপনি প্রায়ই তীব্র মাথা ব্যথায় ভোগেন, তবে সতর্ক হওয়া উচিত। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সাধারণ ভেবে অবহেলা করা এই মাথা ব্যথাই পরবর্তীতে স্ট্রোক বা ব্রেন টিউমারের মতো মারাত্মক সমস্যার কারণ হতে পারে।
৪. প্রস্রাবের সমস্যা:
কম জল খেলেই কেবল প্রস্রাবের সমস্যা হয় না। সাধারণ মনে হলেও এটি বড় কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে। হার্নিয়া, টিউমার, স্নায়ু বা কিডনির সমস্যার কারণেও প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রস্রাবের সমস্যা হলে প্রচুর জল পান করার পাশাপাশি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং কোনো তথ্য গোপন করবেন না।
৫. পিঠে ব্যথা (ব্যাক পেইন):
পিঠে ব্যথা এখন অনেকের নিত্যসঙ্গী। বসার ভঙ্গি বা শোয়ার কারণে ব্যথা হতে পারে, তবে সবক্ষেত্রে তেমনটা নাও হতে পারে। এটি শারীরিক কোনো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের কাছে আপনার সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ দিন।
৬. মাথা ঘোরা:
মাথা ঘোরানোকে অনেকেই দুর্বলতা বা রোদে ঘোরার ফল মনে করেন। তবে এর কারণ আরও মারাত্মক হতে পারে। স্ট্রোক সিন্ড্রোমের মতো কারণেও মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সমস্যাটিকে হালকাভাবে না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭. দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া:
দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। এটি স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হতে পারে। চোখে কোনো সমস্যা দেখা দিলে বা দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ কমতে থাকলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সুস্থ থাকার জন্য নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। নিজের সমস্যার কথা চিকিৎসকের কাছে খুলে বলুন, যাতে তিনি সঠিক রোগ নির্ণয় করে আপনাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারেন।