সুখ-শান্তির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অনেকেই বলেন, ভালোবাসার একজন মানুষ থাকা, নিজের পছন্দের কিছু করার সুযোগ থাকা এবং কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারাই জীবনের মূল ভিত্তি। এই ধারণায় হয়তো কিছু সত্যতাও রয়েছে। তবে শুধুমাত্র একজন ভক্তিপূর্ণ জীবনসঙ্গী, একটি উঁচু পদের চাকরি কিংবা বিলাসবহুল জীবনযাপনই সবসময় সুখ এনে দিতে পারে না। এমনকি এই তিনটি জিনিস হাতের মুঠোয় থাকলেও এমন সময় আসতে পারে যখন আপনি গভীর অসুখী বোধ করতে পারেন। আমাদের মন-মেজাজ বহু বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে জীবনযাপন পদ্ধতি, অতীতের অভিজ্ঞতা এবং জিনগত কারণও।
বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, যেসব ব্যক্তি প্রায় সবসময় ভালো মেজাজে থাকেন, তাদের শরীরে সাধারণত কিছু হরমোনের উচ্চমাত্রা দেখা যায়। যেমন – এন্ডোফিন্স, নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন এবং সেরোটোনিন। এই হরমোনগুলো মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হয় এবং মানুষের মধ্যে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। যখন আমরা কোনো আনন্দদায়ক কিছু উপভোগ করি অথবা যখন কোনো মনোরম ঘটনা ঘটে, তখন এই হরমোনগুলো মস্তিষ্কে আরও বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়।
আমাদের মানসিক অবস্থা আংশিকভাবে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অথবা শারীরিক বিভিন্ন কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তবে বাকিটা নির্ভর করে আমরা কোনো বিষয় নিয়ে কীভাবে চিন্তা করি এবং আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিককে কীভাবে সামলাই তার উপর। আমাদের আবেগ-অনুভূতির উপর আমাদের নিজেদের প্রভাব অনেক বেশি, যতটা আমরা সাধারণত মনে করি তার চেয়েও বেশি। আমরা সবসময় নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলো এড়িয়ে যেতে না পারলেও, মানসিক ভারসাম্যের একটি গোপন রহস্য রয়েছে। যখন আপনি কোনো কিছু পছন্দ করেন অথবা যখন আপনি নেতিবাচক চিন্তার চেয়ে ইতিবাচক চিন্তাকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং দেখতে পান যে আপনার জীবন চলার পদ্ধতি আপনার মনকে প্রভাবিত করছে, তখনই আপনি সেই রহস্য উপলব্ধি করতে পারবেন।
আসলে, সুখ একটি বহুমাত্রিক অনুভূতি। এটি কেবল বাহ্যিক পরিস্থিতির উপরই নির্ভরশীল নয়, বরং আমাদের ভেতরের মানসিক অবস্থা এবং জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির উপরও অনেকখানি নির্ভর করে। ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিজের আবেগগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার মাধ্যমেই সত্যিকারের সুখ ও শান্তি অর্জন করা সম্ভব। তাই শুধু ভালোবাসার মানুষ খোঁজা বা বড় স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি।