শিশুদের সম্মান: উপেক্ষা নয়, বিকাশের চাবিকাঠি

কোনো পরিবারে যখন সম্মানের বিষয়টি সামনে আসে, তখন প্রায়শই শিশুদের প্রান্তিক করে রাখা হয়। সম্মানকে একটি একমুখী প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়, যা কেবল বয়স্কদের প্রাপ্য – এমন ধারণা সমাজে বদ্ধমূল। তবে এই ধারণা বাস্তবতার থেকে বহু দূরে। শিশুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাদের মানসিক, সামাজিক এবং মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া একটি শান্ত ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে, যা শিশুদের আত্মবিশ্বাসী, সহানুভূতিশীল এবং দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিশুরা মূলত তাদের বড়দের আচরণ দেখেই শেখে। যখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক তাদের সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলেন, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাদের অনুভূতির প্রতি সহানুভূতি দেখান, তখন শিশুদের মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং তাদের আত্মসম্মান বৃদ্ধি পায়। সম্মানজনক আচরণ শিশুদের তাদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার সাহস যোগায়।

যখন একটি শিশু অনুভব করে যে তার কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনা হচ্ছে এবং তার ভাবনা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের মতামত, চিন্তা এবং লক্ষ্যের কথা বলতে উৎসাহিত হয়। এর মাধ্যমে একটি পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়। এই বিশ্বাস পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যে, শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন স্থাপন করে, যেখানে চিন্তাভাবনার অবাধ আদান-প্রদান সম্ভব হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সম্মানজনক আচরণ শিশুদের মধ্যে এই বোধ জন্মায় যে তারা মূল্যবান। এই অনুভূতি শেষ পর্যন্ত তাদের একটি ইতিবাচক আত্ম-পরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করে তোলে।

শিশুদের প্রতি সম্মান দেখালে স্বাভাবিকভাবেই তাদের জন্য একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়। শুধুমাত্র কর্তৃত্ব ফলানোর পরিবর্তে তাদের সঙ্গে আলোচনা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা উচিত। আপনি যদি শিশুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তাহলে তাদের সামনে গঠনমূলকভাবে মতবিরোধ নিষ্পত্তির সঠিক উপায় তুলে ধরুন। এর মাধ্যমে শিশুরা বুঝতে পারবে যে কোনো যুক্তিসঙ্গত আলোচনা করার জন্য রাগ বা অসম্মান দেখানোর প্রয়োজন নেই। এই শিক্ষা তাদের জীবনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ অযথা ঝগড়া ছাড়াই মোকাবিলা করতে সক্ষম করে তুলবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডঃ অমিতাভ রায় বলেন, “শিশুদের সম্মান দেওয়া কেবল একটি সামাজিক কর্তব্য নয়, এটি তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ মানসিক বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের সমাজকে নেতৃত্ব দেবে।”

সুতরাং, আসুন আমরা সকলে শিশুদের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল হই এবং তাদের প্রাপ্য সম্মান দিই। কারণ একটি সম্মানজনক পরিবেশই একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সহায়ক।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy