শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে চাইলে, এই কথাগুলি মাথায় রাখুন

স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা সকলেই কম বেশি সচেতন। স্বাস্থ্যের অন্তর্গত মানসিক স্বাস্থ্য হলেও শারীরিক স্বাস্থ্যকে আমরা বেশি প্রশ্রয় দেই। কেননা এটি আমাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। এই শরীরে যখন রোগ বাসা বাঁধে তখন আমাদের ভুগতে হয় নানা রকমের অসুস্থতায়।

নানা রকমের রোগ জীবাণু আমাদের শরীরে বাসা বেঁধে বাধ্য করে বেশ কিছুদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে। যার ফলে আমাদের শুরু হয় নানা ধরনের যন্ত্রনা। কর্মস্থলে যাওয়া তো একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে ঘরের কাজকর্ম যেন কেউ ঠিকমতো করতে পারি না। শিক্ষার্থী হলে তো কথাই নেই, অসুস্থ হলে বাবা মায়েরা পড়তে পর্যন্ত দিতে চান না, আর সামনে পরীক্ষা থাকলে তো কোন কথাই নেই।

যাই হোক মূল কথা হচ্ছে শরীর স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য রোগ মুক্ত থাকা অনেক প্রয়োজন। রোগমুক্ত আমরা তখন ই থাকতে পারব যখন আমাদের শরীরে কোন ধরনের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির মতো রোগ জীবাণু বাসা বাঁধবে না। কিন্তু ঠিক কি কাজ করলে আমাদের শরীরে কোন ধরনের রোগ জীবাণু বাসা বাঁধবে না, এটা কি আমরা জানি? অনেকে জেনে থাকবেন তবুও আজকের আর্টিকেলটিতে মূলত কিভাবে শরীরের রোগ মুক্ত রাখা যায় তা নিয়ে একটু আলোচনা করা হবে। তো চলুন দেরী না করে শুরু করা যাক।

স্নানের ভূমিকার শেষ নেই
শরীরকে রোগমুক্ত রাখার জন্য প্রথমে আমাদের যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে প্রতিনিয়ত স্নান করা। বলা হয়ে থাকে শীতকালে বেশি না ঘামলে বা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে স্নান করার প্রয়োজন নেই। তবে একথা খুব একটা মানেন না অনেকে। আবার যারা শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে একটু বেশি সচেতন তারা দেখা যায় যে শীত গ্রীষ্ম উভয় ঋতুতেই সমান তালের স্নান করেন।

সত্যি বলতে কখন আমাদের শরীরে কোন জীবাণু বাসা বেঁধে ফেলে আমরা তা ঠিক মত বলতে পারি না। যার কারণে আমাদেরকে প্রতিদিনই স্নান করা উচিত। এতে করে নিজের অজান্তে কোনো অপবিত্র নোংরা কোন কিছু শরীরে লেগে গেলেও তা সহজেই ধুয়ে যায় আর আমরা রোগ জীবাণু থেকে বেঁচে যেতে পারি।

প্রতিদিন অল্প একটু শরীর চর্চা করা হোক
শরীর চর্চা বা যোগ-ব্যায়াম নিয়ে আলাদা কোন কিছু বলার দরকার নেই। কারণ আমরা সকলেই জানি শরীরচর্চা আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য কতটা জরুরী। আপনাকে শরীরচর্চা করার জন্য জিমে যেতে হবে না কিংবা এমন কোন যোগ ব্যায়ামাগারেও গিয়ে আপনাকে শরীরচর্চা করতে হবে না।

আপনি বাড়িতে বসে খুব সহজে কয়েকটা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিতে পারেন। সকালে দ্রুত ঘুম থেকে উঠুন। মুখ ধুয়ে বারান্দায় বা ছাদে যেখানে ভালো সূর্যের আলো পড়ছে সেরকম একটি জায়গায় মাদুর বিছিয়ে ছোটখাটো ইয়োগা বা মেডিটেশন করে নিতে পারেন।

এছাড়াও যদি সুযোগ সুবিধা থাকে তবে আশেপাশে থাকা কোন পার্কে গিয়ে অল্প একটু জগিং করে আসাটাও কিন্তু খারাপ নয়। মূলকথা সকালের শুরুটা যদি আপনি শরীরচর্চা দিয়ে শুরু করতে পারেন তবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে। আপনার সারাদিন খুবই ভালো যাবে। আপনার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। তাই চেষ্টা করুন দিনের শুরুটা শরীরচর্চার দিয়েই করতে।

দাঁত ব্রাশও কোনো অবহেলা নয়
শরীর রোগমুক্ত রাখার মধ্যে কিন্তু দাঁত পরিষ্কার রাখাও পরে। কেননা মুখগহ্বর এমন একটি জিনিস যেখান দিয়ে মূলত আমাদের শরীরের ভেতরে ঢোকার রাস্তা শুরু হয়। একমাত্র মুখগহবর দিয়ে শরীরের ভেতরে যে কোন জিনিস প্রবেশ করতে পারে। অর্থাৎ মুখগহবর হচ্ছে আমাদের শরীরে প্রবেশের দরজা।

এই দরজাই যদি পরিষ্কার না থাকে তবে ভেতরটা কিভাবে পরিষ্কার থাকবে? এটা হিসেব মেলানো কঠিন। আমরা যখন রাতে ঘুমাই তখন আমাদের মুখ থেকে নানা ধরনের এনজাইম নিঃসরণ হয়। যেখান থেকে ব্যাকটেরিয়ার বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। পরবর্তীতে সকালে সেই ব্যাকটেরিয়াই দুর্গন্ধ ছড়ায়।

শুধু তাই নয়, খাবার খাওয়ার পর যদি খাবার কনা দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে লেগে থাকে সেখান থেকেও দাঁত ক্ষয় হয়ে যেতে পারে বা ক্যাভিটি দেখা দিতে পারে। সুতরাং দাঁতের যত্নেই হোক আর শরীর রোগ জীবাণু মুক্ত রাখলেই হোক না কেন ভালো মত দাঁত ব্রাশ করা বেশ জরুরি। তবে কথা আছে।

দু মিনিটের নিচে ব্রাশ করা একদমই উচিত নয়। কমপক্ষে দু মিনিট পরিমাণমতো টুথপেষ্ট নিয়ে ভালো করে উপরের ও নিচের পাটির দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। এতে করে শরীরে রোগ জীবাণু বাসা বাঁধার আগে দোরগোড়ায়েই মারা যাবে।

রান্নাঘরের বেসিনটা কি পরিষ্কার?
যদি আপনার এই ধরনের অভ্যাস থাকে যে আপনি রান্নাঘরের বেসিন এ একই সাথে মাংস কাটাকাটি করেন এবং একই সাথে সবজি কাটাকাটি করেন, কিংবা মাংস ও সবজি একই স্থানে রেখে দেন তবে বিষয়টা খুবই বাজে হয়ে দাঁড়ায়। কেননা কাঁচা মাংসে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে।

স্বাভাবিক, জৈবিক জিনিসে ব্যাকটেরিয়া থাকা খুবই স্বাভাবিক। অন্যদিকে শাকসবজিতে সে তুলনায় থাকে না। তো যখন কাঁচা মাংসের সাথে শাকসবজি বা অন্যান্য জিনিসপত্র একই বেসিনের রাখা হয় তখন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ অধিক হারে বেড়ে যায়। তাই যখন আপনি রান্নাঘরের বেসিন এ মাংস রেখে দিবেন চেষ্টা করবেন শাকসবজি সেখানে না রাখতে।

আবার অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে মাংস বা শাক সবজি কাটার জন্য দু’ধরনের ছুরি ও দু’ধরনের চপিং বোর্ড ব্যবহার করা উচিত। একই জিনিস দিয়ে কাটাকাটি করাটা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ অধিকহারে বাড়িয়ে দেয়।

মূত্রের বেগ আটকে রাখা যাবে না
আপনার যদি এই ধরনের বদ অভ্যাস থেকে থাকে এখনই পরিহার করুন। কেননা যদি আপনি মূত্র চেপে ধরে রাখেন তা আপনার কিডনির ওপর প্রভাব ফেলবে। এটার কারণে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে। কিডনিতে পাথর জমা কিডনিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ এই একটি বদঅভ্যাস এর জন্যই হয়ে থাকে।

পরবর্তীতে কিডনি ফেইলুর হয় ও কিডনি প্রতিস্থাপনের আশ্রয় নিতে হয়। যদি সঠিক সময়ের মধ্যে কিডনি না পাওয়া যায় তখন রোগী মারাও যেতে পারে। মূত্র ত্যাগের অভ্যাস করুন এবং এটি কখনো চেপে রাখবেন না। মনে রাখবেন যে আপনার শরীরের সবথেকে বড় বর্জ্যপদার্থটাই হচ্ছে মূত্র।

এবং বর্জ্য পদার্থ যদি শরীরে জমতে থাকে তবে সেটা শরীরের জন্য অবশ্যই ভালো না। যেকোনো স্থানের বর্জ্য পদার্থ ফেলে দেওয়াই ভালো। সুতরাং মূত্র চেপে রাখার অভ্যাস অতিশয় দূর করুন।

আশা করি আপনারা প্রত্যেকেই শরীরকে রোগমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে উপরের পদ্ধতিগুলোর অনুসরণ করবেন। আমরা সকলেই একটি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রোগমুক্ত শরীর চাই। আমাদের শরীর খারাপ হোক এটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy