রাতে দই খেলে কি আদৌ শরীরের কোনো ক্ষতি হয়? খাওয়ার আগে জেনেনিন

শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং নানাবিধ রোগের খপ্পর থেকে বাঁচাতে নিয়মিত দই খাওয়া যে মাস্ট, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া, ভিটামিন এবং আরও নানাবিধ মিনারেল যখন শরীরে প্রবেশ করে, তখন বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে। তবে তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা জরুরি। কী প্রশ্ন? এক সমীক্ষায় দেখা গেছে অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন রয়েছে, আর তা হল গরমকালে রাত্রি বেলা দই খেলে কি সত্যিই শরীরের কোনও ক্ষতি হয়? না, কোনও ক্ষতি হয় না।

তবে এক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন, যেমন ধরুন… অল্পতেই ঠান্ডা লাগলে না তো! সাধারণত রাতের বেলা দই খেলে সেভাবে শরীরে কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু যাদের সহজেই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ধাত রয়েছে, তাদের সন্ধ্যার পর দই না খাওয়াই ভাল। কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে সূর্য ডোবার পর দই খেলে শরীরে অন্দরে মিউকাস জমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সর্দি-কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

চিনি বা গোলমরিচ মাস্ট: দিনের বেলা শুধু শুধু দই খাওয়া চলতে পারে! কিন্তু যদি রাতের বেলা দই খাওয়ার ইচ্ছা জাগে, তাহলে অল্প চিনি বা গোলমরিচ মিশিয়ে দইটা খেতে হবে। এমনটা করলে হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। ফলে গ্যাস-অম্বলের আশঙ্কা কমবে।

দই ভাত চলতেই পারে: রাতের বেলা যদি দই খেতেই হয়, তাহলে দই ভাত খাবেন। এই খাবারটি শরীরকে ঠান্ডা করার পাশাপাশি হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

লস্যি বা বাটার মিল্ক: ঘরে পাতা দই যদি রাতের বেলা খেতে মন না চায়, তাহলে এক গ্লাস লস্যি বা বাটার মিল্ক কিন্তু খাওয়ার যেতেই পারে! কারণ খাবার হজম করতে যেমন দইয়ের কোনও বিকল্প নেই, তেমনি ঘুমনোর সময় শরীরের মামাবিধ ক্ষতের চিকিৎসা করতেও এই পানীয় দুটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শরীরকে যদি চাঙ্গা রাখতে হয়, তাহলে রাতের বেলা দই খেতে ভুলবেন না যেন!

রায়তাও চলতে পারে: বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে রাতের বেলা দই খেলে শরীরের কথা ভেবে তার প্রকৃতিটা একটু পরিবর্তন করে নেওয়াই ভাল। আর এক্ষেত্রে রায়তার থেকে ভাল কোনও বিকল্প আছে বলে তো মনে হয় না। আসলে রাতের বেলা খাবার খাওয়ার পর এক বাটি রায়তা খেলে কিন্তু শরীরের বেশি উপকারই হয়। আর যদি তাতে নানা ধরনের সবজি এবং লঙ্কা মেশানো থাকে তাহলে তো কথাই নেই! তবে আপনি যদি একজন সুস্থসবল মানুষ হন, তাহলে সব চিন্তাকে গুলি মেরে আজ থেকেই রাতের বেলা খাবার শেষে এক বাটি করে দই খাওয়া শুরু করুন, তারপর দেখুন কী হয়! আসলে এমনটা করলে নানাবিধ শারীরিক উপকার মেলে। যেমন ধরুন…

১. স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দই খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে যেসব মরণ রোগগুলির কারণে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তার প্রায় সবকটির সঙ্গেই স্ট্রেসের যোগ রয়েছে। তাই তো নিয়মিত দই খাওয়ার প্রয়োজনয়ীতা যে বেড়েচে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই।

২. ওজন কমে:
অতিরিক্তি ওজনের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে নিয়মিত এক বাটি করে দই খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। বিশেষত ভুঁড়ি কমাতে দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির গবেষকদের করা একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, সেই সঙ্গে কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণও কমে যায়। ফলে ওজন হ্রাসের সম্ভাবনা প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।

৩. হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
দুধের মতো দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদান দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বুড়ো বয়সে গিয়ে যদি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো রোগ আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে এখন থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে দেখবেন উপকার মিলবেই মিলবে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে সংক্রমণ থেকে ভাইরাল ফিবার, কোনও কিছুই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়। ভারতের বৃহত্তম আঞ্চলিক দেশী বিজ্ঞাপন মঞ্চতে বিজ্ঞাপন দিন এই শুক্রবার সুযোগ শেষ হচ্ছে৷বড় ব্রান্ডে বড় সুযোগ৷এখনি কিনুন হ্যান্ডব্যাগে ২০০০০+স্টাইলস-এ অ্যামাজনে সেরা ডিল

৫. ভিটামিনের ঘাটতি দূর হয়:
নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে শরীরে পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন এবং জিঙ্কের ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ভিটামিন বি৫ এবং বি১২-এর মাত্রাও বাড়তে থাকে। আর এই সবকটি উপাদানই যে নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে, তা কি আর বলে দিতে হবে! এই যেমন ধরুন ভিটামিন বি১২ লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. হজম ক্ষমতা চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
বেশি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দইয়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলিতে হজমে সহায়ক ভাল ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমাতে দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, পৃথক একটি গবেষণায় দেখা গেছে পেপটিক আলসার হওয়ার পিছনে দায়ি এইচ পাইলোরি নামক ব্য়াকটেরিয়াকে মেরে ফলতেও দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। সেই কারণেই তো পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় দইয়ের অন্তর্ভুক্তির পিছনে সাওয়াল করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

৭. হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
রক্তে খারাপ কোলেস্টরল বা এল ডি এল-এর মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় দই। তাই তো নিয়মিত এই দুগ্ধজাত খাবারটি খেলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই তো পরিবারে যদি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ইতিহাস থাকলে দইকে সঙ্গ ছাড়ার ভুল কাজটি করবেন না যেন!

৮. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
দইয়ে পরিমাণ মতো বেসন এবং অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন তাহলে ত্বক নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না। আসলে দইয়ে থাকা জিঙ্ক, ভিটামিন ই এবং ফসফরাস এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পলন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই ফেস প্যাকটি সপ্তাহে কম করে ২-৩ বার লাগালে দারুন উপকার মেলে।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy