যুগের সাথে বদলাচ্ছে জীবনযাত্রার ধরন: মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি

এক সময় মাসিকের সময় কাপড়ের টুকরা ব্যবহার করে মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন বজায় রাখতেন আমাদের মা-ঠাকুমার generation। এখনো গ্রামের অনেক নারী একই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। আজকের এই লেখা যারা পড়ছেন, তারা হয়তো অনেকেই তাদের পরিবারের বয়স্ক মহিলাদের কাছে স্যানিটারি প্যাড দেখার অভিজ্ঞতার কথা শোনেননি। সেই আমলে স্যানিটারি প্যাডের সহজলভ্যতা ছিল না। পুরাতন ত্যানা কাপড় ব্যবহার করেই তারা মাসের এই দিনগুলো পার করতেন। যার ফলে অনেকেই ভ্যাজাইনাল ক্যান্ডিডিয়াসিস, ট্রাইকোমোনাস ইনফেকশন, হেপাটাইটিস-বি এমনকি জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। তবে যুগ পাল্টেছে, আর সেই সাথে বেড়েছে আমাদের সচেতনতা।

বর্তমানে মাসিকের সময় ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে সহজলভ্য। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

স্যানিটারি প্যাড
কাপড়ের প্যাড
ট্যাম্পন
মেনস্ট্রুয়াল কাপ
তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য স্যানিটারি প্যাড একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের সুবিধা:

স্যানিটারি প্যাডে রক্ত শোষণের জন্য বিশেষ স্তর থাকে, যার ফলে ব্যবহারকারী ভেজাভাব অনুভব করেন না। এছাড়াও,

নিয়মিত সময় অন্তর পরিবর্তন করলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
হাঁটাচলা ও দৈনন্দিন কাজকর্ম সহজে করা যায়।
হাইজিন মেনটেইনের জন্য স্যানিটারি প্যাড কখন পরিবর্তন করবেন?

প্যাড পরিবর্তনের সঠিক সময় নির্ভর করে পিরিয়ডের ফ্লো এবং প্যাডের শোষণ ক্ষমতার উপর। সাধারণভাবে, স্যানিটারি প্যাড ৬-৭ ঘণ্টা পর পরিবর্তন করা উচিত। তবে যাদের বেশি ফ্লো হয়, তাদের ৩-৪ ঘণ্টা পর পরিবর্তন করা জরুরি। প্যাড পুরোপুরি ভিজে যাওয়ার আগেই পরিবর্তন করা উচিত, কারণ বেশি দেরি করলে লিকেজ হতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

হাইজিন মেনটেইনের জন্য যা করা উচিত:

১. পিরিয়ডের সময় জরায়ুতে খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্থ থাকার প্রথম শর্ত। প্যাড ব্যবহারের আগে হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে, যাতে হাতের মাধ্যমে জীবাণু কোনোভাবেই প্যাডে না প্রবেশ করে।

হাত ধোয়া

২. প্যাড ব্যবহারের পর কাগজ বা প্যাকেটে ভালোভাবে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলুন। স্যাঁতসেঁতে জায়গায় জীবাণু খুব দ্রুত জন্মায়। তাই খোলা অবস্থায় ওয়াশরুমে ফেলে রাখা উচিত নয়।

কাপড়ের প্যাড কি স্বাস্থ্যসম্মত?

যদি কাপড়ের প্যাড ব্যবহার করতেই হয়, সেক্ষেত্রে কাপড়টি পরিষ্কার, নরম, শুকনো ও অধিক শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন হতে হবে। একই কাপড় বারবার ব্যবহার করতে হলে, একবার ব্যবহারের পর সাবান ও পরিষ্কার জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। সম্ভব হলে স্যাভলন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে কড়া রোদে ভালোভাবে শুকাতে হবে এবং পরিষ্কার শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। একজনের ব্যবহৃত কাপড় অন্য কারো ব্যবহার করা উচিত নয়। ব্যবহৃত কাপড় কাগজে মুড়িয়ে ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে অথবা গর্ত করে মাটির নিচে পুঁতেও রাখা যেতে পারে। তবে কাপড়ের চেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর এবং এতে হাইজিন বজায় রাখা সহজ।

আমাদের দেশে অনেক মেয়েরাই ইউরিন ইনফেকশন ও জরায়ু ক্যান্সারে ভোগেন, যার প্রধান কারণ অপরিষ্কার থাকা। বর্তমানে দেশেই ভালো মানের প্যাড বা ন্যাপকিন পাওয়া যাচ্ছে, যা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যের। তাই নিজেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

প্যাডের বিকল্প মেনস্ট্রুয়াল কাপ:

সিলিকন বা ল্যাটেক্স রাবার দিয়ে তৈরি কাপের মতো একটি বস্তু ঋতুস্রাবের সময় ব্যবহার করা হয়। ইউরোপ ও আমেরিকাতে এই পণ্যটি এখন বেশ জনপ্রিয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পনের মতো এটি রক্ত শোষণ না করে জমা করে রাখে, যা পরবর্তীতে ফেলে দেওয়া যায়। স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পন একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হয়, তবে মেনস্ট্রুয়াল কাপ সঠিকভাবে পরিষ্কার করার পর বহুবার ব্যবহার করা যায়। যারা বারবার প্যাড পরিবর্তনের ঝামেলা এড়াতে চান, তারা এই কাপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে নিয়ম মেনে সঠিক উপায়ে ভালো মানের মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে হবে।

মেনস্ট্রুয়াল কাপ

তবে যোনিপথে বা জরায়ুতে কোনো সমস্যা থাকলে, মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মাসিক একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমেই একটি মেয়ে নারীতে পরিণত হয় এবং সন্তান জন্মদানের প্রাথমিক সক্ষমতা অর্জন করে। তবুও এই বিষয়টি নিয়ে আমরা সহজে কথা বলতে বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। এমনকি অনেক মা-ও মেয়েদের ছোটবেলা থেকে পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতন করার ব্যাপারে সংকোচ বোধ করেন। মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অসচেতন থাকলে শরীরে নানারকম রোগ বাসা বাঁধতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য স্যানিটারি প্যাড সঠিকভাবে ব্যবহার করুন এবং সময়মতো পরিবর্তন করুন। নিজের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন!

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy