মাস শেষে মন খারাপ? ঘরে বসেই টাকা জমানোর সহজ কৌশল!

মাস শেষে হিসাব মেলাতে গিয়ে আপনারও কি মন খারাপ হয়? “কিনবো না কিনবো না” করেও একগাদা অপ্রয়োজনীয় খরচের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন? প্রতি মাসে পণ করছেন আর অযথা খরচ করবেন না, কিন্তু পরের মাসেই সেই একই ভুল! একদিকে সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কূলকিনারা পাচ্ছেন না? এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই টাকা জমানোর সহজ কিছু উপায় নিয়ে দুশ্চিন্তা করাটা স্বাভাবিক। তবে জানলে অবাক হবেন, এই সমস্যা শুধু আপনার একার নয়। আশেপাশে অনেকের সঙ্গেই কথা বললে বুঝবেন, কমবেশি এই হুটহাট খরচের প্রবণতা আমাদের সবার মধ্যেই রয়েছে। তাই আর চিন্তা না করে আজই একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে ফেলুন। নিজের মনকে শক্ত রাখুন এবং সাধ্যমত সেই পরিকল্পনা অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন? আজকের আর্টিকেলে আমরা জানাবো ঘরে বসেই টাকা জমাতে চাইলে কীভাবে প্ল্যানিং করবেন সেই বিষয়েই।

ঘরে বসেই টাকা জমাতে চান?

দৈনন্দিন জীবনে খরচের শেষ নেই। এই সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও হিমশিম খেতে হয়। তার উপর নিজের শখ-আহ্লাদের কিছু ব্যাপার তো থাকেই। মাসিক আয় যাই হোক না কেন, ঘরে বসেই টাকা জমানোর সহজ কিছু কৌশল মেনে চললে আপনি সহজেই একটি ভালো পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক ঘরে বসেই টাকা জমাতে কী কী করবেন:

ঘরে বসেই টাকা জমানোর উপায়:

১) মাসের বড় খরচগুলো আলাদা করে নিন:

মাসিক আয় হাতে আসার আগেই একটি খাতায় বা নোটপ্যাডে প্রথমেই মাসের বড় খরচগুলো আলাদা করে নিন। যেমন – খাবার খরচ, যাতায়াত খরচ, বাড়ি ভাড়া এবং বিভিন্ন বিলের খরচ। অনেকেই প্রতি মাসে টুকিটাকি শপিং করে থাকেন। খুব প্রয়োজন না হলে জামাকাপড়, জুতা এই আইটেমগুলো বড় খরচের তালিকা থেকে বাদ দিন। অথবা এমনভাবে মনস্থির করতে পারেন, যেই মাসে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান থাকার সম্ভাবনা আছে, শুধু সেই সময়েই এই খরচগুলো করবেন। এতে প্রতি মাসে বেশ ভালো একটি অর্থ সাশ্রয় হবে।

২) ছোট খরচগুলো তালিকাভুক্ত করতে ভুলবেন না:

খরচ যত ছোটই হোক না কেন, সেটি অবশ্যই খরচের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন – ওষুধের খরচ অথবা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির খরচ। এই খরচগুলো কিন্তু প্রতি মাসেই হয়। এছাড়াও, অনেক সময় আমাদের কাছের মানুষদের বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান, যেমন – জন্মদিন বা বিয়ের প্রোগ্রাম থাকে। আপাতদৃষ্টিতে তেমন বেশি মনে না হলেও, মাস শেষে এই খাতে ভালো একটা অঙ্ক খরচ হয়ে যায়। তাই ভেবে দেখুন, আপনার এমন ছোট ছোট খরচগুলো কোথায় হচ্ছে এবং এই ছোট খরচগুলো তালিকাভুক্ত করতে ভুলবেন না।

খরচের তালিকা

৩) চূড়ান্ত বাজেট তৈরি করুন:

বড় ও ছোট খরচগুলো আলাদা করা হয়ে গেলে, এবার একটি চূড়ান্ত বাজেট তৈরি করুন। কত টাকা আপনার মাসিক আয় এবং কত টাকা খরচের খাতে গেল, তা এখন সহজেই আলাদা করতে পারবেন। এই সময় প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে আপনি কী পরিমাণ সঞ্চয় করতে চান। ধরুন, আপনার মাসিক আয় ৫০,০০০ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে আপনার হাতে আছে ৩,০০০ টাকা। কিন্তু আপনি চাচ্ছেন প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা সঞ্চয় করতে। এই সময় খরচের তালিকায় আরও একবার ভালো করে নজর বুলিয়ে দেখুন, কোন খরচটা এই মাসে কিছুটা কমালেও চলবে। এভাবে আপনার নির্ধারিত ৫,০০০ টাকা আলাদা করে বাকি টাকা খরচের জন্য নির্দিষ্ট করে সরিয়ে রাখুন।

৪) ব্যাংকে জমাতে না চাইলে একটি পিগি ব্যাংক কিনে ফেলুন:

ঘরে বসে যারা সঞ্চয় করতে চান, তাদের অনেকের কাছেই ব্যাংকের প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। ৪ বা ৫ হাজার টাকার জন্য নিয়মিত ব্যাংকে যাতায়াত করাটাও অনেক সময় ঝামেলার মনে হয়। এসব ভেবে বেশিরভাগ সময়ই জমানো আর শুরুই করা হয় না! মূলত শুরুতেই আপনার মনস্থির করতে হবে, যা কিছুই হোক না কেন ‘আমাকে টাকা জমাতেই হবে’। এই টাকাটুকু আপনি কোনোভাবেই খরচ করবেন না – সেটা এখন আপনি ঘরে জমান অথবা ব্যাংকে, সেটি শুধু একটি মাধ্যম। ব্যাংকে জমাতে না চাইলে একটি পিগি ব্যাংক কিনে ফেলুন। মাসের শুরুতে টাকা আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার ব্যক্তিগত পিগি ব্যাংকে টাকাটা আলাদা করে সরিয়ে রাখুন।

ঘরে বসে টাকা জমাতে চাইলে কিনে ফেলুন পিগি ব্যাংক

৫) জমানো টাকা কী কাজে লাগাবেন তার লক্ষ্য স্থির করুন:

মাসে ৫,০০০ টাকা সঞ্চয় করা হয়তো আপনার জন্য তেমন কোনো বড় বিষয় হবে না। কিন্তু বছর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০,০০০ টাকা। কত কিছুই না করা যাবে এই টাকা দিয়ে, তাই না? শুরুতে টাকা জমানোর অনুপ্রেরণা অনেকটাই কম থাকে। তাই ভাবনাটা এভাবে ভাবুন যে, ১ বছর পর আপনি খুব ভালো কোনো কাজে এই টাকাটা খরচ করতে পারবেন, যা হয়তো আপনার অনেক দিনের শখ। তাই জমানো টাকা কী কাজে লাগাবেন, তার একটি লক্ষ্য শুরুতেই স্থির করে নিলে টাকা জমানোটা কষ্টের চেয়ে বেশি আনন্দের মনে হবে।

৬) ‘খরচ করেই ফেলি, জীবনে আর কী আছে’ – এই মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে:

দুই-তিন মাস সুন্দরভাবে টাকা জমানোর পর হঠাৎ করে একদিন হতাশ অনুভব করছেন! কী হবে এত চিন্তা করে, কী হবে এত টাকা জমিয়ে! ‘খরচ করেই ফেলি, জীবনে আর কী আছে!’ – এমন দুর্বল মানসিকতা থাকলে কিন্তু চলবে না। যেকোনো পরিস্থিতিতে এই ধরনের ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একটু ভেবে দেখুন তো, করোনা চলাকালীন অবস্থার কথা! পৃথিবীর কেউই ভাবতে পারেনি হঠাৎ করে এমন এক মহামারীর আক্রমণ হবে। তারপরও যে মানুষগুলোর কিছুটা হলেও সঞ্চয় ছিল, তারা খারাপ দিনগুলোতেও কিছুটা স্বস্তিতে ছিল। আমরা আসলেও জানি না কখন কী হবে। আর এই সঞ্চয়গুলো সবসময়ই একটি শক্তির মতো কাজ করে। তাই হতাশ না হয়ে একটি শক্তিশালী মন নিয়ে টাকা জমানো শুরু করতে হবে।

জীবনে শখ-আহ্লাদ, চাওয়া-পাওয়া থাকবেই। একেক সময় আমরা একেক জিনিসের প্রয়োজন অনুভব করি। তবে যেকোনো কিছু দেখলেই সেটা আমারও লাগবে বা আমাকেও কিনতে হবে, এমনটা কিন্তু নয়। আমাদের শুরুতেই বুঝতে হবে কোনটা আমাদের চাওয়া এবং কোনটা আমাদের প্রয়োজন। জীবনে সবসময় চাওয়ার আগে প্রয়োজনের গুরুত্ব বেশি। আমাদের খরচের খাতগুলোতেও অপ্রয়োজনীয় চাওয়া পাওয়া ত্যাগ করে প্রয়োজন বুঝে খরচ করা শিখতে হবে। আর তাহলেই খুব সহজে ঘরে বসেই টাকা জমানোর সহজ কিছু কৌশল কাজে লাগানো সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy