দৈনন্দিন জীবনে প্রিয়জনদের নিয়ে উদ্বেগ, নিজের ভবিষ্যৎ এবং কোভিড-পরবর্তী জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না। এর পাশাপাশি অফিস ও ঘরের কাজের দ্বৈত চাপ তো রয়েছেই। আর এই সবকিছুর সম্মিলিত প্রভাবে বাড়ছে মানসিক চাপ, যার প্রথম শিকার হচ্ছে আমাদের চুল। মানসিক চাপের কারণেই অনেকের গোছা গোছা চুল পড়ে যাচ্ছে। তাই চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে সবার আগে মনকে চাপমুক্ত রাখা জরুরি।
মানসিক চাপের কারণে কেন চুল পড়ে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক চাপ তৈরি হলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের উপর তার প্রভাব পড়ে। তবে শরীরের বেঁচে থাকার জন্য ফুসফুস, মস্তিষ্ক বা কিডনির মতো অঙ্গ যতটা অত্যাবশ্যক, চুল ততটা নয়। তাই যখন তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, তখন শরীরে উৎপাদিত বেশিরভাগ পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে সঞ্চালিত হয়। এর ফলে চুল ক্রমশ বিবর্ণ ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। তাছাড়া, প্রবল মানসিক চাপ মোকাবিলা করার জন্য শরীর কর্টিসল নামক একটি হরমোন বেশি পরিমাণে উৎপাদন করতে শুরু করে। এই হরমোনের আধিক্যের কারণে চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হতে পারে না। ফলস্বরূপ, চুল পড়া শুরু হয়।
চুল পড়া থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন?
মানসিক চাপ মোকাবেলা এবং চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা যায়:
ইতিবাচক থাকুন: যদি আপনি মানসিক চাপের শিকার হন, তাহলে उन মানুষদের কথা ভাবুন যারা আপনার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন। মনে ইতিবাচক চিন্তা আনুন, ধীরে ধীরে মন হালকা হবে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল, মুরগি, মাছ বা ডিমের যেকোনো একটি অন্তর্ভুক্ত করুন। ছোলা ও ছাতুর মতো খাবারও অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। প্রোটিন চুলের মূল উপাদান কেরাটিন গঠনে সাহায্য করে।
ভেজা চুল আঁচড়ানো এড়িয়ে চলুন: স্নানের পর চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। ভেজা চুল দুর্বল থাকে এবং আঁচড়ালে সহজে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চুল সম্পূর্ণ শুকানোর পরই আলতো হাতে আঁচড়ান।
হেয়ার ড্রায়ারের ব্যবহার কমান: যেহেতু এখন অনেকেই বাড়িতে থাকছেন, তাই তাড়াহুড়ো করে চুল শুকানোর প্রয়োজন নেই। তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে ভেজা চুল মুছে নিন এবং স্বাভাবিক বাতাসে শুকাতে দিন। হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস চুলের ক্ষতি করতে পারে।
তেল মালিশ: নারিকেল তেল বা আমলা তেল হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে ঘষে ঘষে মাখুন। এতে চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। সপ্তাহে অন্তত দুবার তেল মালিশ করা চুলের জন্য উপকারী।
মেথির প্যাক ব্যবহার: এক মুঠো মেথি জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে বেটে নিন। স্নানের আধ ঘণ্টা আগে মাথার ত্বক ও চুলে ভালোভাবে মেখে নিন, তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। মেথি চুলের গোড়া মজবুত করতে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ই ব্যবহার: ভিটামিন ই চুলের জন্য খুবই উপকারী। এটি চুলের গোড়া উজ্জীবিত করতে পারে। একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে ভেতরের তরল তেল সরাসরি মাথার ত্বকে বা আপনার নিয়মিত হেয়ার প্যাকে মিশিয়ে মাখুন। এটি চুলকে দ্রুত মজবুত ও ঝলমলে করে তুলবে।
এই সহজ নিয়মগুলো মেনে চললে কেবল মানসিক চাপ কমিয়ে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, বরং আপনার চুলের স্বাস্থ্যও উন্নত হবে। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই এই যত্ন নেওয়া শুরু করুন।