ব্যাপক শব্দদূষণ কিংবা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার কারণে প্রায়শই আমাদের কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। হঠাৎ করে কানে কম শোনা এবং ভারি বোধ হওয়ার এই অভিজ্ঞতা বেশ বিরক্তিকর। তবে চিন্তার কিছু নেই! ওষুধ ছাড়াই, কয়েকটি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ কৌশল অবলম্বন করে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত কানের ভেতরের ইউস্টেশিয়ান টিউবে বাতাস চলাচল ব্যাহত হলেই এমনটা ঘটে থাকে। এই সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি বেশ কার্যকর হতে পারে। আসুন, সেই উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক:
ভালসালভা ম্যানিউভার: এটি কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় দ্রুত উপশম দিতে পারে। এই পদ্ধতিতে কানের ভেতরের বাতাসের চাপে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা যায়। এর জন্য প্রথমে মুখ বন্ধ করুন এবং হাতের দুটি আঙুল দিয়ে নাকের ছিদ্র চেপে ধরুন। খেয়াল রাখবেন, এই অবস্থায় নাক বা মুখ দিয়ে যেন বাতাস না ঢোকে বা বেরোয়। এরপর নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ার মতো করে সামান্য চাপ দিন, তবে বাতাস যেন বের হতে না পারে। কিছুক্ষণ পর ‘পপ’ শব্দ শুনে বুঝবেন আপনার বন্ধ কান খুলে গেছে। তবে মনে রাখবেন, খুব জোরে চাপ দেবেন না, এতে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রথমবারে কাজ না হলে কয়েকবার চেষ্টা করতে পারেন।
অলিভ অয়েল বা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড: এই দুটি উপাদান বন্ধ ইউস্টেশিয়ান টিউব খুলতে সাহায্য করে। এগুলো কানের ময়লা নরম করে এবং ভেতরকার পথ পরিষ্কার করে দেয়। ব্যবহারের জন্য, যে কানটি বন্ধ, সেটিকে উপরের দিকে রেখে কাত হয়ে শুতে হবে। অন্য কানটি বালিশে রাখুন। এবার একটি ড্রপারের সাহায্যে কয়েক ফোঁটা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড খোলা কানে দিন। হালকা গরম অলিভ অয়েলও একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তেলের তাপমাত্রা অবশ্যই সহনীয় হতে হবে। তেল বা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড যাই ব্যবহার করুন না কেন, তিন থেকে পাঁচ ফোঁটা কানে দেওয়ার পর ৫-১০ মিনিট একইভাবে শুয়ে থাকুন। এরপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন, অর্থাৎ বন্ধ কানটি বালিশে দিয়ে আরও কিছুক্ষণ থাকুন। এতে কানের জমে থাকা ময়লার সঙ্গে তেল বা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বেরিয়ে আসবে।
উষ্ণতার সংকোচন: একটি পরিষ্কার কাপড় গরম জলে ভিজিয়ে নিন। কাপড়টি ভালোভাবে চিপে অতিরিক্ত জল বের করে দিন। এবার এই ভেজা ও গরম কাপড়টি বন্ধ কানের ওপর ৫-১০ মিনিট ধরে রাখুন। উষ্ণতার সংস্পর্শে ভেতরের ময়লা নরম হয়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। সুবিধা চাইলে, বালিশের ওপর কাপড়টি রেখে তার ওপর বন্ধ কানটি চেপে শুয়ে থাকতে পারেন।
প্রতিরোধে করণীয়: একবার এই সমস্যার সম্মুখীন হলে, পরবর্তীতে এর পুনরাবৃত্তি এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
১. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একটি ডিকনজেস্ট্যান্ট সবসময় হাতের কাছে রাখুন। নিজের ইচ্ছামতো কোনো ওষুধ কিনবেন না। বাইরে বের হওয়ার এক ঘণ্টা আগে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
২. ইউস্টেশিয়ান টিউব যাতে সহজে বন্ধ না হয়, তার জন্য অনেকে নাসাল স্প্রে ব্যবহার করেন। তবে এর ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৩. বিমানে উঠলে অনেকেরই কান বন্ধ হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। তাই বিমানে ওঠার কিছুক্ষণ আগে এয়ারপ্লাগ ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।
উপরের এই প্রাকৃতিক কৌশলগুলো অবলম্বন করে অনেকেই কান বন্ধ হওয়ার অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে সমস্যা গুরুতর হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।