পাঁচটি অভ্যাস যা আপনার বিপাক ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে

সক্রিয় মেটবলিজম বা বিপাক ক্ষমতা আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর হার নির্ধারণ করে এবং রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও রক্তচাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যদিও মেটাবলিজম বাড়ানোর অনেক উপায় আমাদের জানা, তবে এমন কিছু সাধারণ অভ্যাস রয়েছে যা অজান্তেই আমাদের বিপাক ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই পাঁচটি অভ্যাস সম্পর্কে:

১. খুব কম খাবার খাওয়া:

অনেকেরই ধারণা, কম ক্যালোরি গ্রহণ করলেই ওজন দ্রুত কমানো যায়। তবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ না করলে শরীর খাদ্যাভাব অনুভব করে এবং বিপাক ক্রিয়ার হার কমিয়ে দেয়। ওজন কমানোর জন্য ক্যালোরি deficit (প্রয়োজনের চেয়ে কম ক্যালোরি গ্রহণ) জরুরি হলেও, অতিরিক্ত কম ক্যালোরি গ্রহণ করলে তা বিপরীত ফল দিতে পারে।

২. অলস জীবনযাপন:

নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন আমাদের প্রতিদিনের ক্যালোরি পোড়ানোর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় বহু মানুষ ঘরে বসে কাজ করার কারণে দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকছেন। এর ফলে বিপাক সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। হাঁটাচলা, ঘর পরিষ্কার করা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা, রান্না করার মতো সাধারণ শারীরিক কার্যকলাপও ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। এই ধরনের কার্যকলাপকে নন-এক্সারসাইজ অ্যাক্টিভিটি থার্মোজেনেসিস (NEAT) বলা হয়।

৩. পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করা:

সুস্থ ওজন বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রোটিন দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর হার বাড়ায়। খাবার হজমের সময় বিপাকের যে বৃদ্ধি ঘটে, তাকে থার্মিক ইফেক্ট অফ ফুড (TEF) বলা হয়। প্রোটিনের TEF ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেটের তুলনায় অনেক বেশি। প্রোটিন গ্রহণ করলে বিপাক ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যেখানে কার্বোহাইড্রেট খেলে ৫-১০ শতাংশ এবং ফ্যাট খেলে ৩ শতাংশ বা তারও কম বৃদ্ধি পায়।

৪. পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া:

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের অভাব হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং বিষণ্নতার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অপর্যাপ্ত ঘুম বিপাক হার কমিয়ে দিতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ায়। অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে, যা মেটাবলিজমের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।

৫. প্রচুর রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট খাওয়া:

রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট, যেমন সাদা রুটি, পাস্তা এবং চিনি প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটের মতো জটিল নয়। এগুলো সহজে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে। এই খাবারগুলো হজম করার জন্য শরীরকে কম শক্তি ব্যবহার করতে হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। এর পরিবর্তে আস্ত শস্য (whole grains) খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। এগুলো হজম করতে শরীরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, ফলে ক্যালোরি পোড়ানো সহজ হয়।

এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করলে বিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy