রাতে পর্যাপ্ত ও আরামদায়ক ঘুম না হওয়া অনেকেরই একটি সাধারণ সমস্যা। সেক্ষেত্রে দুপুরে ঘণ্টাখানেকের ঘুম কিছুটা হলেও সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারে। রাতে ঘুম কম হলে দিনের বেলায় একটু ঘুমিয়ে অনেকেই আরাম বোধ করেন। কিন্তু দিনের বেলা এই ঘুম বা দিবানিদ্রা কি সত্যিই শরীরের জন্য উপকারী? আসুন জেনে নেওয়া যাক এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন।
আমেরিকান জেরিয়াট্রিক্স সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, ৩০ থেকে ৯০ মিনিটের দিনের ঘুম প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে ঘুমের সময় এক ঘণ্টার বেশি হলে তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু মানুষের জন্য দুপুরে ঘুমানোটা যেন একটি রিসেট বোতামের মতো কাজ করে। ঘুম থেকে ওঠার পর তারা সতেজ অনুভব করেন এবং নতুন উদ্যমে দিনের বাকি কাজ শুরু করতে পারেন। যদিও দিনের হালকা ঘুম অনেক সময় রাতের গভীর ঘুমের অভ্যাসে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, তবুও স্বল্প তন্দ্রা অনেকের ক্লান্তি ও ঘুমের জড়তা দূর করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের স্বল্প ঘুম বিভিন্ন উপায়ে আমাদের উপকার করতে পারে। দুপুরে অল্প সময়ের ঘুম শরীরকে শিথিল করে, ক্লান্তি কমায় এবং মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে। এছাড়াও, এটি মেজাজ ভালো রাখতে এবং স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করতেও সাহায্য করে।
একটি গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে যারা বিভিন্ন শিফটে কাজ করেন এবং যাদের ঘুমের নির্দিষ্ট সময়সূচী নেই, তাদের জন্য এই স্বল্প নিদ্রা বা ন্যাপ বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে। এর ফলে তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা হলো, দুপুরে বেশি ঘুমিয়ে নিলে রাতের ঘুমে সমস্যা হতে পারে। দিনের ঘুম যদি ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে সেটি সবচেয়ে ভালো। দুপুরের প্রথম ভাগে অর্থাৎ দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে ঘুমানো উচিত। কারণ সন্ধ্যা হয়ে গেলে দিনের ঘুম রাতের ঘুমের চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
তাদের মতে, দিনের ঘুমের আদর্শ সময়সীমা ২০ থেকে ৩০ মিনিট। তবে এই সময়সীমা ব্যক্তিভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে ছোট ঘুমই বাঞ্ছনীয়। দুপুর ৩টা বেজে যাওয়ার পর না ঘুমানোই ভালো। কারণ দুপুরে বেশি ঘুমালে রাতের ঘুমের স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হতে পারে এবং অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে দিনের বেলা বেশি (এক ঘণ্টার বেশি) ঘুমের একটি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। এছাড়াও, দীর্ঘক্ষণ ধরে দিনের ঘুম কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং হজমের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। দুপুরে ঘুমানোর ক্ষেত্রে সঠিক সময়সীমা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অ্যালার্ম সেট করে ঘুমানো উচিত এবং দুপুর ৩টার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়া উচিত।
ঘুমের সময় সমস্ত দুশ্চিন্তা দূরে রাখা জরুরি, কারণ দিনের ঘুমের মূল উদ্দেশ্য হলো শরীর ও মনকে সতেজ করা। রাতের ঘুম ভালো করার জন্য অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চলা উচিত এবং দুপুর ৩টার পর ক্যাফিনযুক্ত পানীয় থেকে দূরে থাকা উচিত।