দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো ব্রেকফাস্ট। শরীরের সচলতা থেকে শুরু করে রোগমুক্তি – সবকিছুই নির্ভর করে এই সময় কী খাবার, কতটা পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে তার উপর। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় সিংহভাগই ব্রেকফাস্ট ঠিকমতো করেন না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়! একদিকে যেমন শরীর ভাঙতে শুরু করে, তেমনি একাধিক রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে। পরিণতিতে লঘু পাপে গুরুদণ্ড হওয়ার মতো, হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
একেবারেই ঠিক শুনেছেন! ব্রেকফাস্টকে আমরা যতই তাচ্ছিল্যের চোখে দেখি না কেন, সকালবেলা খাবার না খাওয়ার ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা এই প্রবন্ধে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন। আর সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, মাত্র ৫ দিন ব্রেকফাস্ট না করলেই কিন্তু শরীরে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
তাই সাবধান! হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা অনুসারে, যারা নিয়মিত ব্রেকফাস্ট করেন না, তাদের হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা সহ আরও নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। যেমন…
১. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা: যারা সকালে কিছু না খেয়ে দিন শুরু করেন, তাদের শরীরে গ্লুকোজ টলারেন্স বেড়ে যায়। যা একসময় ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের দিকে ধাবিত করে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আসলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে হঠাৎ করে পেট ভরে খেলে শরীরের উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। সেইসঙ্গে দেহে শর্করার মাত্রা এতটাই অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে যে ইনসুলিনের পক্ষে ঠিকমতো কাজ করা সম্ভব হয় না। ফলে ধীরে ধীরে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।
২. ওজন বৃদ্ধি পায়: অনেকেই মনে করেন কম খেলে ওজন কমে। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। বরং যত কম খাবেন, তত বেশি ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। ব্রেকফাস্ট না করার কারণে লাঞ্চের সময় এতটাই ক্ষুধা লাগে যে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়ে যায়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হতে হতে একসময় ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেই কারণেই চিকিৎসকেরা ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনার – এই তিনটি সময়ে ভুলেও খালি পেটে থাকতে নিষেধ করেন।
৩. হজম ক্ষমতা কমে যায়: খাবার হলো শরীরের জ্বালানি, যাকে কাজে লাগিয়ে শরীর সচল থাকে। তাই সকালবেলা কিছু না খেলে শরীরের কাছে সংকেত যায় কম কাজ করার জন্য। কারণ জ্বালানি তো নেই, বেশি কাজ করবে কীভাবে! তাই জ্বালানি বাঁচাতে ধীরে ধীরে শরীর কম কাজ করতে শুরু করে। এমনটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেসাল মেটাবলিক রেট কমে যাওয়ার কারণে হজম ক্ষমতাও কমতে শুরু করে দেয়। ফলে একদিকে যেমন ওজন বাড়ে, তেমনি মেটাবলিজম কমে যাওয়ায় গ্যাস-অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
৪. বুদ্ধি কমে যায়: ব্রেকফাস্ট না করলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমতে শুরু করে। সেইসঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ায় মস্তিষ্কে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি বুদ্ধির ধারও কমতে শুরু করে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাচ্চা ব্রেকফাস্ট করে স্কুলে যায়, তারা যত দ্রুত শিখতে পারে, ব্রেকফাস্ট বাদ দেওয়া বাচ্চারা তত দ্রুত কাজ করতে পারে না। তাই মনোযোগ এবং বুদ্ধি বাড়াতে ব্রেকফাস্ট বাদ দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।
৫. এনার্জি লেভেল কমে শুরু করে: ব্রেকফাস্ট আমাদের শরীরের ২৫ শতাংশ এনার্জির চাহিদা পূরণ করে। তাই সকালবেলা পেট খালি রাখার অভ্যাস করলে দেহে এই পরিমাণ এনার্জির ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে শরীর রিজার্ভে রাখা এনার্জিকে কাজে লাগাতে শুরু করে। এমনটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেহের কর্মক্ষমতা কমে এবং কাজ করার ইচ্ছাও চলে যায়। তাই কর্মক্ষেত্রে সফল হতে ব্রেকফাস্টের বিকল্প নেই।
৬. রাগ বাড়তে থাকে: লক্ষ্য করে দেখবেন, যখন পেটে ক্ষুধার আগুন জ্বলতে থাকে, তখন মনমেজাজও কেমন বিগড়ে যায়। তাই সকালবেলা খাবার না খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি মনমেজাজও খারাপ হতে শুরু করে। ফলে কোনো কিছুতেই মন বসতে চায় না। সম্প্রতি ব্রিটেনে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেকফাস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যা মনকে একেবারে চাঙ্গা করে তোলে। আর যারা প্রাতঃরাশ করেন না, তাদের ক্ষেত্রে ঘটে ঠিক উল্টোটা। তাই সকালটা যদি খুশি মনে শুরু করতে চান, তাহলে ভুলেও ব্রেকফাস্টের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না!
সুতরাং, নিজের স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে প্রতিদিন নিয়ম করে স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট গ্রহণ করুন। এই সামান্য অভ্যাস আপনার জীবনযাত্রায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।