বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, এমনকি শিশুরাও এই রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের তুলনায় নারীরা ডায়াবেটিসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং এতে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস নারীর সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর এক বিশাল প্রভাব ফেলে। মূলত অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও অতিরিক্ত ওজনই এই রোগের প্রধান কারণ।
ডায়াবেটিসের মতো মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এর ফলে নারীদের শরীরে একে একে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীরা হৃদরোগ, কিডনির অসুখ, অন্ধত্ব, অবসাদ এবং ইউটিআই (মূত্রনালীর সংক্রমণ)-এর মতো সমস্যায় পুরুষদের তুলনায় বেশি ভোগেন। এছাড়াও, পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম), যৌন চাহিদা কমে যাওয়া, ভ্যাজিনাল ইচিং (যোনিপথে চুলকানি) এবং বারবার মূত্রত্যাগের মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের তুলনায় নারীদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এমনকি বন্ধ্যাত্ব, গর্ভপাত, অপরিণত বাচ্চা প্রসব এবং মেনোপজের (মাসিক বন্ধ) সমস্যাসহ নারী স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে ডায়াবেটিস হলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইপ ১ ও টাইপ ২ – এই উভয় ধরনের ডায়াবেটিসের সঙ্গেই ফার্টিলিটি (প্রজনন ক্ষমতা) কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে সন্তান ধারণের বয়সে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ সুগার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই তা ক্ষতিকর হতে পারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ফ্যালোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি শরীরে সংক্রমণও দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে নারীরা কী করবেন?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে নারীদের কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি:
নির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণ: একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সুষম ডায়েট মেনে চলুন। নিয়মিত ফল ও সবুজ শাকসবজি খান। আটা, বাদামি চালসহ ফাইবার (আঁশ) যুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করুন।
জাঙ্ক ফুড পরিহার: ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকুন। তেল, ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার কম খান। পরিমিত আহার গ্রহণ করাই সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শরীরের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা অপরিহার্য। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। ব্যায়াম করলে শরীরে ইনসুলিন ভালোভাবে কাজ করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খান। ওষুধ আপনাকে সুস্থ রাখতে এবং রোগের progression (অগ্রগতি) কমাতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত চেকআপ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলো-আপে থাকুন।
সুগার পরীক্ষা ও লক্ষ্য নির্ধারণ: নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন। সেই অনুযায়ী নিজের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার লক্ষ্য স্থির করুন এবং তা মেনে চলুন।
সচেতনতা এবং সঠিক জীবনযাপনই ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নারীদের রক্ষা করতে পারে। তাই রোগের শুরুতেই সতর্ক হোন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন।