ঘুমালে আমরা সাধারণত বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। চারপাশে কী ঘটছে, তা আমাদের জানার কথা নয়। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি, তবে অনেক সময় সেই স্বপ্নও বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। কিন্তু কখনো কি এমন হয়েছে যে পাশে ঘুমিয়ে থাকা কেউ আপনার সম্পর্কে এমন কিছু কথা পরের দিন সকালে বলছেন যা তার জানার কথা নয়?
আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, ঘুমের ঘোরে কথা বলার অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে। ছোট থেকে বড়, এই প্রবণতা প্রায় সকলের মধ্যেই দেখা যায়। যদি আপনি সম্প্রতি জানতে পারেন যে ঘুমের মধ্যে আপনিও কথা বলেন, তবে এটি নিঃসন্দেহে কিছুটা অস্বস্তিকর অনুভূতি দিতে পারে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় রয়েছে। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ঘুমের মধ্যে কথা বলার কারণ:
বিশেষজ্ঞরা ঘুমের মধ্যে কথা বলার নির্দিষ্ট কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:
অসুস্থতা ও দুর্বলতা: শারীরিক অসুস্থতা বা দুর্বলতা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং এর ফলে ঘুমের মধ্যে কথা বলার প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। এর ফলে ঘুমের বিভিন্ন স্তরে ভারসাম্য বজায় থাকে না এবং ঘুমের মধ্যে কথা বলার সম্ভাবনা বাড়ে।
মানসিক চাপ: দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং অস্থিরতা ঘুমের গুণগত মান কমিয়ে দেয়। এই কারণেও ঘুমের মধ্যে অনেকে কথা বলতে পারেন।
ঘুমের মধ্যে কথা বলা বন্ধ করতে যা করবেন:
সুখবর হলো, কিছু নিয়ম মেনে চললে ঘুমের মধ্যে কথা বলার সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করা হলো:
ঘুমের সময়সূচী মেনে চলুন: প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করুন। এটি আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে (circadian rhythm) সঠিক পথে চালিত করতে সাহায্য করবে এবং ঘুমের গুণগত মান বাড়াবে।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীর ও মনকে সতেজ রাখে এবং ঘুমের মধ্যে কথা বলার প্রবণতা কমায়।
রাতে হালকা খাবার গ্রহণ করুন: রাতে ঘুমানোর আগে ভারী খাবার গ্রহণ করা হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই রাতের খাবার হালকা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
সন্ধ্যার পর চা-কফি পরিহার করুন: চা ও কফিতে ক্যাফিন থাকে, যা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে এবং ঘুম আসতে বাধা দেয়। তাই সন্ধ্যার পর চা বা কফি পান করা উচিত নয়।
মানসিক চাপ কমান: মানসিক চাপ ঘুমের প্রধান শত্রু। এটি কমাতে নিয়মিত ঘুরতে যান, প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান এবং যোগা বা ব্যায়ামের মতো অভ্যাস তৈরি করুন।
ঘুমের আগে স্মার্টফোন ব্যবহার পরিহার করুন: হাতের স্মার্টফোন ঘুমের সময় নষ্ট করার অন্যতম কারণ। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করুন। ফোনের নীল আলো ঘুমের হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি আপনি নিয়মিত ঘুমের মধ্যে কথা বলতে থাকেন এবং উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চলার পরেও কোনো উন্নতি না দেখেন, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্য কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, ঘুমের মধ্যে কথা বলা আপাতদৃষ্টিতে তেমন ক্ষতিকর না হলেও, এটি আপনার ঘুমের গুণমান এবং সঙ্গীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই আজ থেকেই আপনার ঘুমের যত্নে মনোযোগী হন।