গরম জল না ঠান্ডা জল দিয়ে চুল ধোয়া উচিত তা নিয়ে মতানৈক্য থেকেই থাকে। কেউ চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে গরম জলকে প্রাধান্য দেয়, কেউ বা আবার ঠান্ডা জল দিয়ে চুল ধুতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এই বিষয়টা শুধুমাত্র প্রাধান্য দিতেই সীমাবদ্ধ। অনেকে ঠিকমতো জানেন না তারা আসলে গরম বা ঠাণ্ডা জল দিয়ে চুল ধুয়ে আসলে কি চুলের কোন ক্ষতি করছে না চুলের উপকার করছে।
তাছাড়া শীতকালে ঠান্ডা জল দিয়ে স্নান করার কথা চিন্তাও করা যায় না। ঠান্ডা জলের কথা মাথা আসলেই যেন হাড় সহ সম্পুর্ন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। তবুও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই মেইন্টেন করতে হয়। এক প্রকার বাধ্য হয়েই তখন গরম জল এর আশ্রয় নিতে হয়। তবে গরম জল চুলের জন্য কতটা ভালো আপনারা কি জানেন?
আজকের এই আরটিকেল এর মূল বিষয় চুলের জন্য কোন জল শ্রেয়, ঠান্ডা জল নাকি গরম জল। দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
তার আগে আমরা গরম জল ও ঠান্ডা জলের উভয়ের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে জেনে নেব।
গরম জলর ক্ষেত্রে কি হয়
অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন চুলের জন্য গরম জল একদমই ভালো না। গরম জল যখন মাথায় ঢালা হয় তখন মাথার ত্বকের মারাত্নক ক্ষতি হয় এবং চুলের গোড়া ফেটে যায়। এই গরম জল ব্যবহারের কারণে আমাদের মাথার ত্বকে যে প্রাকৃতিক তেল রয়েছে সেটি কেটে যায়। যার কারণে চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ। গরম জল ব্যবহারের কারণে চুল নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
যার কারণে চুলকে প্রাণহীন দেখায়। অনেকে আছেন প্রতিদিন নিয়ম করে গরম জলে চুল ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করেন। এতে করে যে মাথার চুল অনেকটাই পড়ে যায় তা হয়তো আপনারা জানেন না। গরম জল মাথার ত্বকে পড়লে মাথার পোর গুলো খুলে যায়। যার কারণে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এবং চুল নিমিষেই ঝরে পড়ে। বেশি গরম জল ব্যবহারে আবার দেখা যায় মাথার ত্বকে জ্বালাপোড়া শুরু করে।
বিভিন্ন এলার্জির কারণও হতে পারে এই গরম জল। আবার বেশি গরম জল ব্যবহারের কারণে মাথার ত্বকের টিস্যু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যার ফলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে অক্সিজেনের আনা গোনা। বাধাগ্রস্ত হতে পারে পুষ্টিও। গরম জল ব্যবহারের ফলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে চুলের রঙ ও।
ঠান্ডা জলের ক্ষেত্রে কি কি হতে পারে
গরম জল যেরকম চুলের জন্য ভালো না, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা জলও চুলের জন্য ভালো না। যেমন শীতকালে জল বরফের মত ঠান্ডা হয়ে থাকে। এখন এই জল যদি আপনি চুলে ব্যবহার করেন তাহলে খুব ভালো একটা ফলাফল পাওয়ার আশা না করাই ভালো। কেননা অনেক গরম জল যেরকম চুলের জন্য ক্ষতিকর তেমনি অনেক ঠান্ডা জলও চুলের জন্য ক্ষতিকর। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান অল্প ঠান্ডা জল চুলের জন্য বেশ ভালো। ঠান্ডা জল প্রতিনিয়ত চুলের গোড়ায় ব্যবহার করার অভ্যাস চুলকে ভালো রাখে।
এর কারণ হলো ঠান্ডা জল চুলকে মিশ্রন করে রাখে এবং ঠান্ডা জল ব্যবহারের ফলে সহজে চুল কুঁকড়িয়ে যায় না, গোড়া থেকে ভেঙে যায় না। একই সাথে ঠান্ডা জল ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকে জ্বালা পোড়ার কোন কারণ নেই। তবে হ্যাঁ ঠাণ্ডা জল দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে প্রতিনিয়ত চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি স্নান করার সময় যেই ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করেন সেই ব্র্যান্ডের কন্ডিশনার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। কিংবা সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করেন।
এভাবে নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে চুলে জট লাগবে না, চুল মসৃণ ও ঝরঝরে থাকবে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা জল ব্যবহারে চুলের ক্ষতি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
আমরা উভয়ের সমস্যা দেখলাম। অতিরিক্ত গরম জলের ব্যবহার চুলের জন্য খুব খারাপ সেটা আমরা জানতে পারলাম। তবে অল্প গরম জল ব্যবহারে দোষ নেই। এতে করে চুলের গোড়ার মধ্যে যদি কোন রকমের গুটিকা থেকে থাকে সেটি চলে যায়। তাই সকলের জন্য ভালো হবে খুব গরম জল কিংবা খুব ঠাণ্ডা জল ব্যবহার না করে মোটামুটি একটা তাপমাত্রার জল মাথার চুলের জন্য ব্যবহার করা। এতে করে চুল নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না। চেষ্টা করুন অতিরিক্ত গরম জল ও অতিরিক্ত ঠান্ডা জল দিয়ে চুল ধুয়ে পরিষ্কার করার অভ্যাস এড়াতে। একটি স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল ব্যবহার করুন।
এছাড়াও চুলের যত্নে আরও যে সকল জিনিস একটু খেয়াল রাখা উচিত তা হলো
১) শীতকালে অনেকে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকেন৷ নিঃসন্দেহে এটি চুলের জন্য অনেক ভালো ও সহজ উপায়। তবুও অনেক বেশি ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো না।
২) চুলের ধরন অনুযায়ী চিরুনি ব্যবহার করুন। মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা চুলের জন্য বেশ ভালো। এতে চুল কম পরিমাণে পরে। আবার জটও ছুটে যায়। তবু আপনার চুল যদি অনেক বেশি পাতলা হয় তবে আপনি চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন। এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের আলাদা আলাদা চিরুনির ব্যাবস্থা করতে।
আপনার একটি নির্দিষ্ট চিরুনি থাকবে আপনি সেটা কাউকে ব্যবহার করতে দেবেন না। না পরিবারের সদস্যদের না কোন বন্ধু বান্ধবদের। ওটা একান্তই আপনার থাকবে। একটি চিরুনি বেশ ক’জন ব্যবহার করার ফলে খুশকির সংক্রমণ কিংবা উপরের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
৩) আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই স্নানের পর শরীর মোছার জন্য ও জল মোছার জন্য একই টাওয়ার ব্যবহার করে থাকেন তবে বিষয়টা কিন্তু একদমই উচিত না একই টাওয়ার ব্যবহার করা চুলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় চুলের জন্য মাইক্রো ফাইবার জাতীয় কাপড়ের টাওয়াল ব্যবহার করা উচিত এতে করে চুল পড়ার সমস্যা দূর হবে
৪) চেষ্টা করুন ঘুমানোর সময় নরম বালিশে ঘুমাতে। যেটার কভার হবে মসৃণ সিল্কের। রাতে আমরা অনেকটা সময় বালিশে ঘুমিয়ে থাকি এবং এপাশ-ওপাশ করি। ফলে বালিশের সাথে চুলের ঘর্ষণের কারণে চুল পড়ে যেতে পারে। এই ঘর্ষণটা প্রতিরোধ করতেই মূলত কোন ধরনের সুতির বালিশের কভার ব্যবহার না করে মসৃণ সিলিকনের বালিশের কভার ব্যবহার করুন। এতে আপনার চুল পড়া কমে যাবে। এছাড়াও ঘুমানোর সময় মাথায় হেয়ার ক্যাপ পরে শুতে পারলে ভালো হয়।