য়স বাড়ার সাথে সাথে চেহারায় তার ছাপ পড়া স্বাভাবিক। তবে অনেক সময় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কারণে বয়সের আগেই ত্বক বুড়িয়ে যেতে দেখা যায়। কিন্তু একবারও কি লক্ষ্য করেছেন, কোরিয়ান নারীদের বয়স যেন সহজে বাড়তেই চায় না? তাঁরা শুধু আকর্ষণীয় নন, বরং অত্যন্ত ফিট, পাতলা এবং সুস্থও বটে। কোরিয়ান কিশোরী, তরুণী, মধ্যবয়সী কিংবা এমনকি ৬০-৭০ বছর বয়সী নারীরাও যেন তাঁদের কাছাকাছি বয়সের তুলনায় অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও তরুণ থাকেন। তাঁদের দেখে সহজে বয়স নির্ধারণ করা কঠিন।
বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষই কোরিয়ান নারীদের এই আকর্ষণীয় ফিটনেস দেখে কৌতূহলী ও বিস্মিত। তাঁদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন সম্পর্কে জানার আগ্রহ সকলেরই। চলুন তবে আজ জেনে নেওয়া যাক কোরিয়ান নারীদের বয়স ধরে রাখার সেই গোপন রহস্য:
সুষম খাদ্য তালিকা:
বিভিন্ন ডায়েট তালিকায় যেখানে নির্দিষ্ট কিছু খাবার বাদ দেওয়া বা কমিয়ে খাওয়ার কথা বলা হয়, সেখানে কোরিয়ান নারীরা তাঁদের খাদ্য তালিকায় সব ধরনের খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখেন। তাঁরা প্রায় সবকিছুই খান, তবে পরিমিত পরিমাণে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট – এই সবকিছু নিয়েই তাঁদের স্বাস্থ্যকর কোরিয়ান ডায়েট গঠিত হয়। অর্থাৎ, তাঁদের খাবারের তালিকা থাকে সুষম। তবে তাঁরা খাবারের পরিমাণের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন এবং কখনোই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করেন না। এর পাশাপাশি, তাঁদের দৈনন্দিন রুটিনে শারীরিক নানা কার্যকলাপও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
শাকসবজিকে প্রাধান্য:
আপনি যদি কখনো ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান খাবার চেখে দেখেন, তবে খাবার টেবিলে সবচেয়ে বেশি দেখবেন বিভিন্ন ধরনের সবজির পদ। কোরিয়ানদের পছন্দের খাবারের তালিকায় প্রথমেই থাকে বিভিন্ন শাকসবজির নাম। তাঁদের স্লিম ও সুস্থ শরীরের পেছনে এটি একটি অন্যতম প্রধান কারণ। বেশিরভাগ শাকসবজি ফাইবারযুক্ত, স্বাস্থ্যকর এবং কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ার কারণে তা ওজন কমাতে সহায়ক। সবজিতে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে অন্যান্য উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকা যায়।
ফার্মেন্টেড ফুডস (Fermented Foods):
সচেতন কোরিয়ান নারীরা তাঁদের প্রায় সকল খাবারের সাথেই একটি সাইড ডিশ হিসেবে ফার্মেন্টেড ফুডস রাখেন। এই ধরনের খাবার অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং হজমের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এটি কেবল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই সাহায্য করে না, সেইসাথে ওজন কমাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিমচি (Kimchi) কোরিয়ার সবচেয়ে পরিচিত ফার্মেন্টেড খাবার।
ফাস্টফুডের চেয়ে ঘরে তৈরি খাবার বেশি পছন্দ:
কোরিয়ান নারীদের ফিট শরীরের অন্যতম প্রধান কারণ হলো তাঁরা বাড়িতে তৈরি খাবার পছন্দ করেন। যখন আপনি ওজন কমাতে চান, তখন বাড়িতে তৈরি খাবারের চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর ফাস্টফুড খেলে তা আপনার ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। কোরিয়ান নারীরা বাইরে খাওয়ার পরিবর্তে বাড়িতে বসে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন।
সামুদ্রিক খাবার:
কোরিয়ার অন্যতম প্রধান খাদ্য হলো সামুদ্রিক খাবার। ফ্যাটযুক্ত সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি তাঁরা আরেকটি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, সেটি হলো সামুদ্রিক শৈবাল (Seaweed)। এটি কোরিয়ার একটি পরিচিত খাদ্য উপাদান যা বিভিন্ন খাবারের সাথে যোগ করে খাওয়া হয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে।
সক্রিয় জীবনযাপন:
বেশিরভাগ কোরিয়ান হাঁটতে ভালোবাসেন। তাঁরা তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য গণপরিবহনের পরিবর্তে হেঁটে যেতেই বেশি পছন্দ করেন। তাঁরা তাঁদের জীবনযাত্রাকে সক্রিয় রাখেন, যা বেশিরভাগ কোরিয়ান নারীর সুস্থ থাকতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমরা সকলেই জানি, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য শারীরিক কার্যকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোরিয়ান নারীদের এই জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসই তাঁদের বয়স ধরে রাখতে এবং ফিট থাকতে সাহায্য করে। তাঁদের এই রহস্য অনুসরণ করে আপনিও একটি সুস্থ ও তারুণ্যদীপ্ত জীবন পেতে পারেন।