দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে নারীরাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন। কিডনির সমস্যা একটি পর্যায়ে তাদের সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনকি সন্তান এলেও দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা। সম্প্রতি কিডনি ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের কিডনি রোগে ভুগছেন। প্রতি বছর ৪০ হাজারের বেশি মানুষের কিডনি সম্পূর্ণভাবে অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন নারীরা। পারিবারিক সহযোগিতা ও সচেতনতার অভাবে অনেকেই সময় মতো চিকিৎসকের কাছে পর্যন্ত যেতে পারছেন না। নিজেদের সমস্যার কথা লুকিয়ে রাখার প্রবণতার কারণে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে বেশি।
কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত দুটি প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল – ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন। তবে দুটি পদ্ধতিই অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক হারুন অর রশিদ কমিউনিটি হাসপাতালগুলোকে কিডনি চিকিৎসার কাজে লাগানোর উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক হাসপাতালগুলো প্রায়শই শুধু তাদের মুনাফার কথা চিন্তা করে।
অধ্যাপক রশিদ আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী ২০ বছরেও দেশের সকল কিডনি রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব নয়। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়, তাহলে কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিডনি চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন এবং সাশ্রয়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিডনি রোগের ভয়াবহতা কমাতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সহজলভ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি। নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে তারা সময় মতো রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার সুযোগ পান এবং মাতৃত্বের পথে কোনো বাধা না আসে।