সর্দি-কাশির সমস্যায় কমবেশি সকলেই ভোগেন। তবে কফের রং দেখে শরীরের ভেতরের অনেক রোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আপাতদৃষ্টিতে সামান্য মনে হলেও, কফের রং পরিবর্তন কিন্তু বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই কফের রং সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। আসুন, জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন রঙের কফ কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে:
হলুদ: যদি আপনার কফের রং গাঢ় হলুদ হয়, তবে তা শরীরে বড় ধরনের সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে সাইনাসের সমস্যা বাড়লে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। অবহেলা করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
কালো: হালকা কালো রঙের কফ দূষিত পরিবেশে বসবাসের কারণে হতে পারে। যারা কয়লা খনিতে বা ধোঁয়াযুক্ত স্থানে কাজ করেন, তাদের এমন কফ দেখা যেতে পারে। তবে, কফের রং কালচে হলে মিউকারমাইকোসিস নামক একটি বিরল ছত্রাকজনিত সংক্রমণেরও আশঙ্কা থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই রোগের কারণে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০ শতাংশ। তাই কালো কফ দেখলে একেবারেই দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান।
গোলাপি বা লাল: কফের রং গোলাপি বা লালচে হলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। অনেক সময় ফুসফুসে তরল জমা হলে (যা চিকিৎসা পরিভাষায় ‘এডিমা’ নামে পরিচিত) এমনটা ঘটে। দীর্ঘদিনের বুকে জমা কফের কারণে সংক্রমণ হলে ফুসফুসে এই তরল জমতে শুরু করে এবং শ্লেষ্মার রং পরিবর্তিত হয়ে যায়। এছাড়াও, নাকের টিস্যু ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হলেও কফের রং লালচে হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাদামি: যারা অতিরিক্ত ধূমপান করেন, তাদের কফের রং বাদামি হতে পারে। দীর্ঘদিনের ধূমপানের অভ্যাসের ফলে ফুসফুসের গঠন পরিবর্তিত হয়। এর পাশাপাশি ব্রঙ্কাইটিসের ঝুঁকিও বাড়ে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে এবং বুকে কফ জমা হতে থাকে। এমনকি, কখনও কখনও কফের সঙ্গে রক্তও বের হতে পারে। ধূমপায়ীদের কফের রং বাদামি হলে অবিলম্বে ধূমপান ত্যাগ করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাদা: থকথকে এবং ঘন সাদা শ্লেষ্মা দেখা গেলে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এর অর্থ হতে পারে নাকের কোষগুলো সংক্রমণের কারণে ফুলে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে শ্লেষ্মা বের হতে বাধা পাচ্ছে এবং পর্যাপ্ত আর্দ্রতার অভাবে শ্লেষ্মার প্রকৃতি এমন হচ্ছে। ব্রঙ্কাইটিস বা সাইনাসের সমস্যার কারণেও এই ধরনের সাদা কফ দেখা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কফের রং পরিবর্তনকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এটি শরীরের ভেতরের কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখুন এবং কফের রঙের অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।