প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। এটি যেমন শরীরের কোষ গঠনে সাহায্য করে, তেমনই পেশি তৈরি ও মেরামতের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যায়ামবীর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ – সকলের শরীরেই প্রোটিনের প্রয়োজন। তবে প্রোটিন কখন খেলে শরীর তার সম্পূর্ণ উপকারিতা গ্রহণ করতে পারবে, তা অনেকেরই অজানা। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিন গ্রহণের সঠিক সময় নির্ভর করে আপনার শারীরিক চাহিদা এবং লক্ষ্যের উপর। তবে কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যখন প্রোটিন গ্রহণ করলে আপনি সর্বাধিক উপকারিতা লাভ করতে পারেন:
১. ব্যায়ামের পর: ব্যায়ামের পর পেশি পুনরুদ্ধার এবং নতুন পেশি গঠনের জন্য প্রোটিন গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। ব্যায়ামের ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অথবা প্রোটিন শেক খেলে পেশি দ্রুত পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। এই সময় পেশি প্রোটিন গ্রহণের জন্য সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল থাকে।
২. সকালের নাস্তায়: দিনের শুরুতে প্রোটিন গ্রহণ করা সারাদিনের জন্য শক্তি যোগাতে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রোটিন হজম হতে বেশি সময় নেয়, তাই সকালে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। ডিম, দুধ, দই, বাদাম ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস যা সকালের নাস্তায় যোগ করা যেতে পারে।
৩. ঘুমের আগে: রাতে ঘুমানোর আগে প্রোটিন গ্রহণ পেশি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে পারে। বিশেষত ক্যাসেইন প্রোটিন, যা ধীরে ধীরে হজম হয়, ঘুমের সময় পেশিগুলোকে অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে এবং পেশি ভাঙন রোধ করে। দুধ বা ক্যাসেইন প্রোটিন শেক এক্ষেত্রে ভালো বিকল্প হতে পারে।
৪. খাবারের মাঝে: দুই খাবারের মাঝে ক্ষুধা পেলে প্রোটিন সমৃদ্ধ স্ন্যাকস গ্রহণ করা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এড়াতে সাহায্য করে। বাদাম, বীজ, পনির বা প্রোটিন বার এই সময়ের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে।
তবে, দিনের যেকোনো সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং পেশি বিকাশের জন্য জরুরি। কেবলমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে প্রোটিন গ্রহণ করাই যথেষ্ট নয়, বরং সারাদিনে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় মোট প্রোটিনের পরিমাণ গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
কতটা প্রোটিন প্রয়োজন, তা নির্ভর করে আপনার ওজন, বয়স, লিঙ্গ এবং কার্যকলাপের স্তরের উপর। সাধারণভাবে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই চাহিদা আরও বেশি হতে পারে।
সুতরাং, কখন প্রোটিন খাচ্ছেন তার পাশাপাশি কতটা প্রোটিন খাচ্ছেন, সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করে আপনি এর সর্বোচ্চ উপকারিতা লাভ করতে পারেন। প্রয়োজনে একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন, যিনি আপনার জন্য একটি উপযুক্ত প্রোটিন গ্রহণের পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারবেন।