কুকুর পোষার শখ অনেকেরই থাকে এবং পোষ্য হিসেবে ল্যাব্রাডর অনেকের প্রথম পছন্দ। বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাব ও বুদ্ধিমত্তার জন্য এই প্রজাতির কুকুর খুব সহজেই মানুষের মন জয় করে নেয়। তবে একটি ল্যাব্রাডর ছানা বাড়িতে আনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। শুধুমাত্র অন্যের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। আপনার জীবনযাত্রা এবং ল্যাব্রাডরের চাহিদা কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, তা বিবেচনা করা জরুরি।
ল্যাব্রাডরকে আপনার পরিবারের নতুন সদস্য করার আগে যে ৫টি বিষয় অবশ্যই জানতে হবে:
১. ব্যায়ামের চাহিদা: ল্যাব্রাডর অত্যন্ত উদ্যমী এবং কর্মঠ কুকুর। তাদের সুস্থ ও সুখী রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়ামের প্রয়োজন। দীর্ঘক্ষণ ধরে দৌড়ানো, হাঁটা এবং খেলাধুলা তাদের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ হওয়া উচিত। যদি ল্যাব্রাডরকে যথেষ্ট ব্যায়াম করানো না হয়, তবে তারা হতাশ, অস্থির এবং এমনকি আক্রমণাত্মকও হয়ে উঠতে পারে। আপনার যদি একটি সক্রিয় জীবনধারা থাকে এবং আপনি প্রতিদিন তাদের সময় দিতে পারেন তবেই এই প্রজাতি আপনার জন্য উপযুক্ত।
২. প্রশিক্ষণ এবং সামাজিকীকরণ: ল্যাব্রাডররা বুদ্ধিমান এবং খুব দ্রুত শিখতে পারে। তবে তাদের সঠিক পথে চালিত করার জন্য ধারাবাহিক এবং ইতিবাচক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই অন্যান্য কুকুর, মানুষ এবং বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে তাদের সামাজিকীকরণ করানো অপরিহার্য। এটি তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং স্থিতিশীল আচরণ বিকাশে সাহায্য করে। প্রশিক্ষণ না দিলে তারা জেদি এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
৩. স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা: ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুরের কিছু বংশগত স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি থাকে। এর মধ্যে হিপ এবং এলবোর হাড়ের সমস্যা (হিপ ও এলবো ডিসপ্লাসিয়া), চোখের বিভিন্ন রোগ এবং স্থূলতা অন্যতম। একটি ল্যাব্রাডর ছানা দত্তক নেওয়ার আগে তার বংশগতির ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং নিয়মিত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা তাদের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি দ্রুত সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
৪. সঙ্গের প্রয়োজনীয়তা: ল্যাব্রাডররা অত্যন্ত সামাজিক প্রাণী এবং মানুষের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে একা থাকতে পছন্দ করে না। এই কারণেই তারা পারিবারিক কুকুর হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘক্ষণ একা থাকলে ল্যাব্রাডররা উদ্বিগ্ন, একাকী এবং হতাশ বোধ করতে পারে, যা তাদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার যদি এমন একটি জীবনধারা থাকে যেখানে কুকুরটিকে দিনের বেশিরভাগ সময় একা থাকতে হয়, তবে ল্যাব্রাডর আপনার জন্য সঠিক পছন্দ নাও হতে পারে।
৫. খাদ্যাভ্যাস: ল্যাব্রাডরদের খাবারের প্রতি অস্বাভাবিক আসক্তি থাকে এবং তাদের ওজন খুব সহজেই বেড়ে যেতে পারে। স্থূলতা তাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই তাদের নিয়মিত সঠিক পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো এবং পোষ্য যাতে অতিরিক্ত খাবার না খায় সেদিকে কঠোর নজর রাখা জরুরি। তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখা তাদের দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ল্যাব্রাডর ছানা বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করুন। একটি পোষা প্রাণী দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি এবং দায়িত্বের বিষয়। আপনার জীবনযাত্রা যদি ল্যাব্রাডরের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়, তবেই এই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ভালোবাসাপূর্ণ কুকুরটি আপনার পরিবারের জন্য একটি চমৎকার সংযোজন হতে পারে।