সিফিলিস একটি পরিচিত যৌন সংক্রামিত সংক্রমণ (STI), যা সাধারণত সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে অরক্ষিত যৌন মিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না করালে এই রোগ হৃদরোগ, খিঁচুনিসহ বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং জীবন হুমকির কারণ হতে পারে। সিফিলিসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চিকিৎসকরা কনডম ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
সিফিলিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলি প্রায়শই এতটাই হালকা হয় যে অনেকেই প্রথম দিকে এই রোগ শনাক্ত করতে পারেন না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে তবেই রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যান এবং জানতে পারেন যে তারা সিফিলিসে ভুগছেন।
তবে সিফিলিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ জানা থাকলে হয়তো প্রথম দিকেই এই রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে। জেনে নিন এই গুরুতর যৌনবাহিত রোগের কিছু লক্ষণ:
মুখে সাদা দাগ:
যদি আপনার মুখে হঠাৎ করে সাদা দাগ দেখা দেয়, তাহলে এটি সিফিলিসে আক্রান্ত হওয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ৪-১২ শতাংশ সিফিলিস রোগীর মুখে এই ধরনের সাদা দাগ দেখা যায়। মুখ ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশে যেমন বগল, কুঁচকি এমনকি যৌনাঙ্গের আশেপাশেও সিফিলিসের কারণে সাদা ক্ষত দেখা দিতে পারে। সাধারণত আর্দ্র অঞ্চলে এই ধরনের সাদা ঘা বেশি দেখা যায়।
চুল পড়া:
সেকেন্ডারি সিফিলিসের কারণে মাথা, দাড়ি ও ভ্রুর চুল পড়ে যেতে পারে। গবেষণা অনুসারে, চুল পড়ার হার ২.৯-৭ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই চুল পড়ার ধরণ মথ-খাওয়া (patchy hair loss), বিক্ষিপ্তভাবে পড়া অথবা এই দুটির মিশ্রণ হতে পারে। সেকেন্ডারি সিফিলিসের কারণে চুল পড়ার সবচেয়ে সাধারণ ধরণ হলো গোলাকার প্যাটার্ন।
মুখ ও চুল ছাড়াও, এই রোগে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন:
ছোট ঘা (Chancres):
সিফিলিসের প্রথম লক্ষণ সাধারণত ছোট আকারের ঘা, যাকে চ্যাঙ্কার বলা হয়। যেখানে ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরে প্রবেশ করে, সেই স্থানেই প্রথম এই ঘা দেখা দেয়। ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসার প্রায় তিন সপ্তাহ পর চ্যাঙ্কার সাধারণত বিকশিত হয়। সিফিলিসে আক্রান্ত অনেক রোগীই এই ধরনের ঘা টের পান না, কারণ এগুলো সাধারণত ব্যথাহীন হয়। এছাড়াও, এই ছোট ঘা যোনি বা মলদ্বারের ভেতরেও লুকিয়ে থাকতে পারে। সংক্রমণের তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে চ্যাঙ্কার নিজে থেকেই সেরে যায়।
ফুসকুড়ি (Rash):
ছোট ঘা সেরে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। প্রথমে একটি একক ফুসকুড়ি দিয়ে শুরু হলেও, শেষ পর্যন্ত এটি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি হাতের তালু ও পায়ের তলায়ও এই ফুসকুড়ি বের হতে পারে। এই ফুসকুড়ি সাধারণত চুলকায় না এবং এটি রুক্ষ, লাল বা লালচে-বাদামী দাগের মতো দেখতে হয়।
ফ্লুর মতো লক্ষণ:
সিফিলিসের দ্বিতীয় পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশ অসুস্থ বোধ করতে পারেন। হালকা ফ্লুর মতো উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন জ্বর, ক্লান্তি, গলা ব্যথা, ফুলে যাওয়া লিম্ফ নোড, মাথাব্যথা ও পেশিতে ব্যথা ইত্যাদি। যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে এই লক্ষণগুলো কয়েক মাস বা এমনকি বছর ধরে বারবার ফিরে আসতে পারে। ফ্লুর পাশাপাশি ক্লান্তি গুরুতর পর্যায়ের ক্ল্যামিডিয়াল বা গনোরিয়া সংক্রমণের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে এবং এটি হেপাটাইটিস এ, বি ও সি এর কারণেও হতে পারে। এছাড়াও, ফ্লুর মতো লক্ষণ এইচআইভি সংক্রমণের প্রথম দিকের উপসর্গও হতে পারে, যা সংক্রমণের ২-৬ সপ্তাহ পরে দেখা দিতে পারে।
যদি আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। সিফিলিসের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলে গুরুতর জটিলতা এড়ানো সম্ভব।