কামরাঙ্গা, তার বিশেষ আকার ও টক-মিষ্টি স্বাদের জন্য অনেকেরই পছন্দের ফল। গ্রামের আনাচে-কানাচে সহজেই দেখা মেলে এই বাহারি ফলটির। সবুজ ও হলুদ রঙের মিশ্রণে সারা বছরই প্রায় পাওয়া যায় এই ফল। বৈজ্ঞানিকভাবে Averrhoa carambola নামে পরিচিত এই ফলটি ইংরেজিতে Chinese gooseberry বা Carambola নামেও খ্যাত। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে এর ফলন বেশি দেখা যায়।
কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করা কামরাঙ্গা স্বাদে টক বা টকমিষ্টি হতে পারে। কিছু গাছে একাধিকবার এমনকি সারা বছরও এই ফল পাওয়া যায়। ভিটামিন এ ও সি-এর অন্যতম ভালো উৎস এই কামরাঙ্গা।
চিকিৎসকদের মতে, এই মৌসুমী ফলে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। প্রতি একশ গ্রাম কামরাঙ্গায় ৩১ কিলোক্যালরি শক্তি, ৬.৭৩ গ্রাম শর্করা, ৩.৯৮ গ্রাম চিনি, ২.৮ গ্রাম খাদ্য ফাইবার, ০.৩৩ গ্রাম স্নেহ, ১.০৪ গ্রাম প্রোটিন, ০.৩৯ মিলিগ্রাম প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫), ১২ ফোলেট (বি৯) এবং ৩৪.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বিদ্যমান। এছাড়াও কামরাঙ্গায় ভিটামিন এ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও দস্তার মতো প্রয়োজনীয় উপাদানও পাওয়া যায়।
বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে, হাইপারটেনশনে ভুগছেন অথবা হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য কামরাঙ্গা হতে পারে এক সহজ সমাধান। চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি মাত্র এক কাপ কামরাঙ্গার রসই এক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকার দিতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, কামরাঙ্গা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণে কীভাবে সাহায্য করে:
কামরাঙ্গায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন B5 ও ভিটামিন B6 রয়েছে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, কোলেস্টেরল কমাতে এবং হাইপারটেনশন দূর করতে সহায়ক।
এই ফলে ভিটামিন B9 অর্থাৎ ফলিক অ্যাসিড বিদ্যমান, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আম, আঙুর ও আনারসের চেয়েও বেশি ভিটামিন C রয়েছে কামরাঙ্গায়। পাকা কাঁঠাল, কমলালেবু, পাকা পেঁপে, লিচু ও ডাবের জলের চেয়েও বেশি আয়রন পাওয়া যায় এই ফলে। তাই এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে এটি অক্সালেট সমৃদ্ধ ভিটামিন C জাতীয় ফল হওয়ায়, যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের কামরাঙ্গা কম খাওয়াই ভালো।
শুধু ফলই নয়, কামরাঙ্গা গাছের পাতাও অনেক উপকারী। এর পাতায় এলাজিক অ্যাসিড থাকে, যা খাদ্যনালীর ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। পাতা ও কচি ফলের রসে ট্যানিন নামক উপাদান রয়েছে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়ক।
এছাড়াও কামরাঙ্গা সর্দি-কাশিতে দারুণ উপকার দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এটি চুল, ত্বক, নখ ও দাঁতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং মুখের ব্রণ কমাতেও সহায়ক। কাঁচা মরিচ ও কামরাঙ্গার চাটনি, জুস, জ্যাম, জেলি বা আস্ত কামরাঙ্গাও খেতে বেশ সুস্বাদু।
তবে মনে রাখতে হবে, কামরাঙ্গা একটি মজার ফল হলেও খালি পেটে এটি খাওয়া উচিত নয়। ডায়রিয়া হলে কামরাঙ্গা না খাওয়াই শ্রেয়। যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।