গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা আজ আর কারও অজানা নয়। ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধানে এই পানীয় বিশেষভাবে কার্যকরী। বিশেষত, যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের খাদ্যতালিকায় গ্রিন টি একটি অপরিহার্য পানীয় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। তবে, গ্রিন টি পানের সঠিক সময় সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ‘সায়েন্স ডেইলিতে’ প্রকাশিত ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা স্থূলতার ঝুঁকি কমাতে গ্রিন টির ইতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরেছে। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে মেদ ঝরানো শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এই গবেষণাটি আট সপ্তাহ ধরে ইঁদুরের শরীরে চালানো হয়েছিল। স্থূল ইঁদুরদের একটি দলকে দৈনিক উচ্চ-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়, এবং তাদের খাবারের সাথে মেশানো হয় সবুজ চায়ের নির্যাস। অন্য একটি দলকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয় এবং তাদের খাবারেও মেশানো হয় গ্রিন টি নির্যাস।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যে ইঁদুরদের সবুজ চা খাওয়ানো হয়েছিল, তাদের শরীরের ওজন গড়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, যারা গ্রিন টি গ্রহণ করেছিল, তাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রাও স্বাভাবিক ছিল। এমনকি, এই ইঁদুরগুলোর চর্বিযুক্ত টিস্যু ও অন্ত্রের প্রদাহও উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন, গ্রিন টি অন্ত্র থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বের করে দিয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
গবেষকদের মতে, যারা বিপাকীয় সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য নিয়মিত গ্রিন টি পান করা অত্যন্ত উপকারী। মানব শরীরে গ্রিন টির প্রভাব নিয়ে করা আরেকটি গবেষণা অনুসারে, এই চা পান করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে যায়। গ্রিন টি অন্ত্রের খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে, যার ফলে হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং ওজন দ্রুত কমতে থাকে।
তবে, গ্রিন টি দৈনিক কতটা পান করা উচিত? ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, জলের মতো অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। সমীক্ষা অনুযায়ী, সারাদিনে আপনি যতবার খাবার গ্রহণ করবেন, তার আধা ঘণ্টা পর গ্রিন টি পান করাই সবচেয়ে ভালো। এর ফলে গ্রিন টি হজমে সাহায্য করে এবং এর পুষ্টি উপাদানগুলি শরীর ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে।
সুতরাং, ওজন কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গ্রিন টি একটি চমৎকার পানীয়। তবে, সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে পান করলেই এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।