মাইগ্রেন কতটা কষ্টকর, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। অসহ্য মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এবং আলো ও শব্দের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা – এইগুলি মাইগ্রেনের প্রধান লক্ষণ। যদিও এই সমস্যার কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে এর তীব্রতা কিছুটা কমানো সম্ভব।
অনেকেই জানেন না যে, খাবার মাইগ্রেনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তির শরীরের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল, তবে কিছু খাবার রয়েছে যা মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এড়িয়ে যাওয়া বা সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া উচিত। অবাক করার বিষয় হলো, এর মধ্যে এমন কিছু খাবারও রয়েছে যা আমরা সাধারণত মাথাব্যথার উপশমের জন্য উপকারী মনে করি! কিন্তু মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে সেগুলো সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক সেই তিনটি খাবার সম্পর্কে:
১. অতিরিক্ত ক্যাফেইন:
ক্যাফেইন ছাড়া আপনার দিন শুরু হয় না? এই অভ্যাসটি হয়তো ততটা খারাপ নয়। তবে যদি আপনি মাইগ্রেন এড়াতে চান, তাহলে কফি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনা অনুসারে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে প্রকাশিত দুটি গবেষণাতেও এই তথ্য প্রমাণিত হয়েছে। যদিও পরিমিত পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে মাইগ্রেন থেকে দূরে থাকতে চাইলে দিনে দুই কাপের বেশি কফি খাওয়া উচিত নয়।
২. চকোলেট:
হ্যাঁ! আপনার প্রিয় মিষ্টি খাবারটি মাইগ্রেনের আক্রমণ এবং ব্যথা ডেকে আনতে পারে। চকোলেটে ক্যাফেইন এবং টাইরামিন নামক উপাদান থাকে, যা মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। এমনও হতে পারে যে আপনার শরীর চকোলেট খেতে চাইছে কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাইগ্রেনের লক্ষণগুলির উপশমে সাহায্য করতে পারে। তবে চকোলেট খাওয়ার ফলে আপনার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে চকোলেট খাওয়ার পরেই আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা শুরু হচ্ছে, তাহলে যতটা সম্ভব এই খাবারটি এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
৩. ড্রাই ফ্রুটস এবং বাদাম:
ড্রাই ফ্রুটস এবং বাদামকে সাধারণত স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে গণ্য করা হয়, কিন্তু আপনি কি জানেন যে এই খাবারগুলোও মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে? অ্যাসোসিয়েশন অফ মাইগ্রেন ডিসঅর্ডার-এর তথ্য অনুযায়ী, বাদাম এবং শুকনো ফল যেমন কিশমিশ, খেজুর, এপ্রিকট এবং টিনজাত ডুমুরে উচ্চ মাত্রার ফেনিল্যালানিন থাকে, যা মাইগ্রেনকে ট্রিগার করতে পারে। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। যদি এই ধরনের খাবার খাওয়ার পর আপনার মাইগ্রেন শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
যদি আপনি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে আপনার খাদ্যতালিকার উপর বিশেষ নজর রাখা জরুরি। এই তিনটি খাবার বাদ দিয়ে অথবা কম পরিমাণে গ্রহণ করে আপনি হয়তো আপনার মাইগ্রেনের তীব্রতা কিছুটা হলেও কমাতে পারবেন। আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন এবং সেই অনুযায়ী খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করুন। প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।