নারী নাকি পুরুষ, কার মস্তিষ্ক বড়? কেমব্রিজ-অক্সফোর্ডের গবেষণা জানাল আসল তথ্য

মস্তিষ্ক ছাড়া মানুষ একটি পশুর সমান। প্রাণিজগতের মধ্যে মানব মস্তিষ্কই সবচেয়ে জটিল। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের গড় আয়তন পুরুষের প্রায় ১৫০০ সিসি এবং নারীদের প্রায় ১৩০০ সিসি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নারী ও পুরুষের মধ্যে আসলে কার মস্তিষ্ক বড়? এই বিষয়ে বিস্তারিত উত্তর দিয়েছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমআরআই-এর মতো অত্যাধুনিক পরীক্ষা ব্যবহার করে নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের আকারের তুলনা করেছেন। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের মস্তিষ্ক নারীদের মস্তিষ্কের তুলনায় গড়ে ৮-১৩ শতাংশ বেশি বড়।

মস্তিষ্কের গঠনে লিঙ্গের পার্থক্য নিয়ে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা নিউরোসায়েন্স গবেষণা পর্যালোচনা করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল। এই গবেষণাটি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত ‘নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড বায়োবিহেভিওরাল রিভিউ’ জার্নালে স্থান পায়।

মনোরোগবিদ্যা বিভাগের ডক্টরাল প্রার্থী অ্যাম্বার রুইগ্রোক, অধ্যাপক জন সাকলিং ও সাইমন ব্যারন-কোহেনের নেতৃত্বে গবেষক দলটি মোট ও আঞ্চলিক মস্তিষ্কের পরিমাণে সামগ্রিক লিঙ্গের পার্থক্য পরীক্ষা করার জন্য মস্তিষ্কের ইমেজিং সাহিত্যের একটি পরিমাণগত পর্যালোচনা করেন। তারা ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকাশিত মোট ১২৬টি নিবন্ধও পর্যালোচনা করেন। এই গবেষণায় জন্ম থেকে ৮০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

গবেষকরা দেখতে পান, পুরুষদের গড় মস্তিষ্কের পরিমাণ নারীদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি (৮-১৩ শতাংশ)। গড় হিসেবে, পুরুষদের ইন্ট্রাক্রানিয়াল স্পেস (১২ শতাংশ), মোট মস্তিষ্ক (১১ শতাংশ), সেরিব্রাম (১০ শতাংশ), ধূসর পদার্থ (৯ শতাংশ) নারীদের তুলনায় বড় পরম আয়তনের ছিল। এছাড়াও, সাদা পদার্থ (১৩ শতাংশ), সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (১১.৫ শতাংশ) ও সেরিবেলাম (৯ শতাংশ) দিয়ে ভরা অঞ্চলও পুরুষদের মস্তিষ্কে তুলনামূলকভাবে বড় ছিল। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, লিঙ্গের মধ্যে আয়তনের পার্থক্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল, যার মধ্যে লিম্বিক সিস্টেমের অংশ ও ভাষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের আকারের এই পার্থক্য মূলত তাদের শারীরিক গঠনের কারণে। সাধারণভাবে পুরুষদের উচ্চতা নারীদের তুলনায় বেশি হয়, যার কারণে তাদের মস্তিষ্কের আকারও প্রভাবিত হয়।

তবে, নারীদের মস্তিষ্ক ছোট হলেও গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। সেটি হলো, নারীদের ইনসুলার কর্টেক্স পুরুষদের তুলনায় বড়। মস্তিষ্কের এই অংশ আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি, যুক্তি ও আত্ম-সচেতনতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এটি সম্ভবত নারীদের বেশি আবেগপ্রবণ হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।

অন্যদিকে, পুরুষদের অ্যামিগডালা তুলনামূলকভাবে বড় হয়। মস্তিষ্কের এই অংশ মোটর দক্ষতা ও বেঁচে থাকা-ভিত্তিক আবেগের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। যার কারণে পুরুষদের মধ্যে উপভোগ করার ক্ষমতা, শারীরিক পরিশ্রম করার প্রবণতা এবং শেখা ও মনে রাখার ক্ষমতা বেশি দেখা যায়।

তবে, নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে বিষণ্নতা, আলঝেইমার, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন্য তাদের এসব রোগ সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। অন্যদিকে, পুরুষদের অ্যালকোহল আসক্তি, অসামাজিক ব্যক্তিত্বের ব্যাধি, অটিজম ও পারকিনসন্সের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।

এই গবেষণা নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যাবলী সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেয় এবং লিঙ্গভিত্তিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy