ঘন ঘন পেইন কিলার খাচ্ছেন? কিডনির বিপদ ডাকছেন অজান্তেই!

মাথাব্যথা বা শরীরের যে কোনো ধরনের ব্যথা হলেই চটজলদি পেইন কিলার খাওয়ার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। অসুস্থতার কারণে ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ খেলেও, এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে যা আপনার কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘস্থায়ীভাবে অতিরিক্ত পেইন কিলার সেবন কিডনি ফেইলিওর বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।

কিডনি প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক একটি রাসায়নিক তৈরি করে, যা কিডনিকে রক্ষা করতে সহায়ক। এটি রক্ত জমাট বাঁধা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজেও সাহায্য করে। আপনি যত বেশি ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করবেন, শরীরে এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের উৎপাদন তত কমতে শুরু করবে, যা কিডনির প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা হ্রাস করে। এরপর কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে কিডনি রোগের দিকে অগ্রসর হয়। যদি আপনাকে পেইন কিলার খেতেই হয়, তাহলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে আপনার খাবার ও জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি:

১. জল পানের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন:
যখন আপনি ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেন, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা কিডনিকে রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে। সারাদিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন, যদি না আপনার অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা থাকে এবং ডাক্তার অতিরিক্ত জল পানে নিষেধ না করেন।

২. ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন গ্রহণ বাড়ান:
বেশিরভাগ ব্যথানাশক ওষুধ আপনার শরীর থেকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হ্রাস করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট অথবা খাবারের মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. ধূমপান বা অ্যালকোহল পরিহার করুন:
ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান করা বন্ধ করা জরুরি, বিশেষ করে যখন আপনি ব্যথানাশক ওষুধ খাচ্ছেন। কারণ এই অভ্যাসগুলো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৪. বাদাম এবং সবজি খান:
আপনার খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, বিশেষ করে সবুজ শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রচুর পরিমাণে বাদাম খান, কারণ ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আপনার কিডনিকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

৫. পরিমিত প্রোটিন গ্রহণ:
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান, তবে তা যেন পরিমিত পরিমাণে হয়। অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। একটানা ব্যথানাশক ওষুধ খেলে মাঝারি পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ চালিয়ে যান।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম:
অসুস্থতা থেকে দ্রুত নিরাময়ের পাশাপাশি কিডনির সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। পেইন কিলার খেলে গভীরভাবে ঘুমানো নিশ্চিত করুন। ঘুমের সময় শরীর তার প্রাকৃতিক মেরামত এবং ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়।

৭. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন:
মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন এবং শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। যদি মানসিক চাপ অনুভব করেন, তবে আপনার মন ও শরীরকে শিথিল করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করুন। আপনার সামগ্রিক মানসিক প্রশান্তি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর উপর থেকে চাপ কমাতে সাহায্য করে।

যদি আপনাকে ব্যথানাশক ওষুধ খেতেই হয়, তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি সঠিক খাবার খাচ্ছেন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করছেন। কখনোই ব্যথানাশক ওষুধের অপব্যবহার করবেন না এবং সর্বদা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রহণ করুন। আপনার কিডনির স্বাস্থ্য আপনার সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy