কাঠবাদাম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার, একথা সকলেরই জানা। তবে, এই বাদাম যদি জলে ভিজিয়ে নিয়ম মেনে খাওয়া যায়, তাহলে এর পুষ্টিগুণ আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। সেই কারণেই পুষ্টিবিদ এবং স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা প্রায় সকলেই বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
কিন্তু শুধু বাদাম ভিজিয়ে রাখলেই চলবে না। এর সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে চাইলে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।
পুষ্টিবিদদের মতে, বাদামের মধ্যে কিছু বিশেষ উৎসেচক (Enzymes) থাকে, যা সক্রিয় হওয়ার জন্য বাদাম ভিজিয়ে রাখা জরুরি। বাদামের খোসায় ফ্যাটিক অ্যাসিড (Phytic Acid) নামক একটি উপাদান থাকে। এই উৎসেচকগুলি ফ্যাটিক অ্যাসিডকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যার ফলে আয়রন, জিঙ্ক ও ক্যালসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজগুলি শরীর সহজে শোষণ করতে পারে। এছাড়াও, যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্যেও বাদাম ভিজিয়ে খাওয়া বিশেষভাবে উপকারী।
বাদাম ভেজানোর সঠিক পদ্ধতি:
১. প্রথমে কাঠবাদামগুলি ভালো করে ধুয়ে নিন।
২. এরপর একটি ছোট পাত্রে পরিশ্রুত জল (Filtered Water) নিন।
৩. ধোয়া বাদামগুলি জলের মধ্যে ডুবিয়ে দিন।
৪. পাত্রের মুখ অবশ্যই ঢাকা দিয়ে রাখুন।
৫. অনেকেই বাদামের খোসা ছাড়িয়ে খেতে পছন্দ করেন না। তবে বাদাম ভেজানোর আগে খোসা ছাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন?
কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে হলে এটিকে সঠিক সময় পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখা অত্যাবশ্যক। ভুল পদ্ধতিতে বা কম সময় ধরে ভিজিয়ে রাখলে আপনি এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পাবেন না। কাঠবাদাম অন্তত ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখা উচিত। সারা রাত ভিজিয়ে রাখলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বাদাম ও জলের সঠিক অনুপাত:
কাঠবাদাম ভেজানোর সময় জলের পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখাটাও জরুরি। পুষ্টিবিদদের মতে, বাদামের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে বাদাম ও জলের অনুপাত ২:১ হওয়া উচিত। এর অর্থ হলো, যদি আপনার কাছে দুই ভাগ বাদাম থাকে, তাহলে এক ভাগ জল ব্যবহার করা উচিত। যেমন, এক কাপ জলে মাত্র তিনটি কাঠবাদাম ভেজানো যেমন যথেষ্ট নয়, তেমনই একমুঠো বাদাম ভেজানোর জন্য এক টেবিল চামচ জলও যথেষ্ট নয়।
যদি আপনি এই অনুপাত নিয়ে দ্বিধায় থাকেন, তাহলে শুধু একটি বিষয় মনে রাখবেন – কাঠবাদামগুলো যেন জলের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ডুবে থাকে। বাদামের সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ রুখতে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং, কাঠবাদামের সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে হলে এটিকে সঠিক পদ্ধতিতে এবং সঠিক পরিমাণে জলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে খান। এটি আপনার হজমক্ষমতা বাড়াতে, খনিজ শোষণ করতে এবং সর্বোপরি আপনার স্বাস্থ্যকে আরও উন্নত করতে সহায়ক হবে।