ত্বক ভালো রাখতে, ওজন কমাতে কিংবা ডায়াবিটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকেই ঘরোয়া টোটকা হিসেবে উচ্ছের রস পান করেন। তবে পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছের রস খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় পুষ্টিকর খাদ্য সামগ্রীও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শরীরে গেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া উচ্ছে খেলে কোন ধরনের সমস্যা হতে পারে, তা জেনে নেওয়া জরুরি।
ঋতুস্রাব ও গর্ভাবস্থায় উচ্ছে এড়িয়ে চলুন:
উচ্ছের রসে মোমোক্যারিন নামক একটি উপাদান রয়েছে। এর ফলে ঋতুস্রাবের সময় বেশি মাত্রায় উচ্ছের রস খেলে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। একই উপাদানের কারণে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে উচ্ছে খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো কিছুই খাওয়া উচিত নয়। এমনকি উপকারী খাদ্য সামগ্রীও চিকিৎসকের নির্ধারিত পরিমাণে খান, তার বেশি খাবেন না।
লিভারের ক্ষতি করতে পারে:
ডায়াবিটিসের রোগীরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত উচ্ছের রস খান। তবে এই অভ্যাস আপনার লিভারের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। অধিক মাত্রায় উচ্ছের রস লিভারের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। উচ্ছের রসে ল্যাক্টিন নামক যে উপাদান রয়েছে, তা লিভারের পক্ষে ক্ষতিকারক। ল্যাক্টিন লিভারে এনজাইমের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা লিভারের ক্ষতি করতে পারে। যাদের আগে থেকেই লিভারের কোনো সমস্যা রয়েছে, তাদের উচ্ছের রস খাওয়া উচিত নয়।
যাদের লো সুগারের সমস্যা রয়েছে:
উচ্ছে খেয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। তাই যাদের সুগার লেভেল আগে থেকেই কম (লো সুগার), তারা উচ্ছে খেলে সুগার লেভেল আরও নেমে যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বমি ও আমাশার সমস্যা হতে পারে:
উচ্ছের স্বাদ অত্যন্ত তেতো হওয়ার কারণে অনেক সময় ডায়াবিটিসের রোগীরা জোর করে এর রস খেয়ে নেন। কিন্তু এর থেকে বমি হতে পারে। এছাড়াও উচ্ছের মধ্যে এমন একটি উপাদান রয়েছে, যা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। উচ্ছেতে টেট্রাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েড কম্পাউন্ড রয়েছে, যাকে কিউকারবিটাসিন্স বলা হয়। এটি বিষাক্ত। এই একই কারণে বাচ্চাদের উচ্ছের রস খাওয়ানোর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সুতরাং, উচ্ছে নিঃসন্দেহে একটি উপকারী সবজি, তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই উচ্ছে খাওয়ার আগে নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।