শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের মধ্যে আয়রন অন্যতম। বিশেষত নারীরাই আয়রনের ঘাটতিতে বেশি ভোগেন। পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং রক্তাল্পতার মতো গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে দুঃখের বিষয়, অনেকেই শরীরে আয়রনের ঘাটতির বিষয়ে তেমন সচেতন নন।
প্রাথমিকভাবে শরীরে আয়রনের অভাবের লক্ষণগুলো সহজে ধরা পড়ে না। তবে কিছু সুস্পষ্ট শারীরিক পরিবর্তন দেখে সহজেই এই ঘাটতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। তাই, কোন লক্ষণগুলি দেখলে বুঝবেন আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, আসুন জেনে নেওয়া যাক:
অতিরিক্ত ক্লান্তি: হঠাৎ করেই যদি আপনি অস্বাভাবিক ক্লান্তিবোধ করেন? যদিও ক্লান্তি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তবে কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই যদি একটানা ক্লান্তি আপনাকে গ্রাস করে, তবে তা শরীরে আয়রনের ঘাটতির একটি বড় লক্ষণ। আয়রনের অভাবে শরীরের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে সহজেই ক্লান্তি অনুভব হয়।
মাথা ঘোরা ও মাথাব্যথা: শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে গেলে মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবের কারণে মাথা ঘোরা, ঘন ঘন মাথাব্যথা এবং শারীরিক অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। এমনকি ঋতুস্রাব চলাকালীন অনেক নারীর মধ্যে মাইগ্রেনের সমস্যাও দেখা যায়, যা আয়রনের অভাবের কারণে আরও বাড়তে পারে।
নখ ভেঙে যাওয়া: আপনার নখ কি সহজেই ভেঙে যাচ্ছে? এই বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। এটিও শরীরে আয়রনের ঘাটতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে। আয়রন নখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। শরীরে আয়রনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে নখ দুর্বল হয়ে যায় এবং সহজেই ভেঙে যেতে শুরু করে।
ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব: শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত পরিবহনের জন্য আয়রন অপরিহার্য। আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরের সব কোষে সমানভাবে রক্ত পৌঁছাতে পারে না। রক্তের অভাবের কারণে ত্বক অনেক সময় তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে। এটি রক্তাল্পতার একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ হিসেবেও বিবেচিত হয়।
বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট: আয়রনের অভাবে যখন শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়, তখন বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এর পাশাপাশি শ্বাস নিতেও অসুবিধা হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের মতো কোনো পূর্ববর্তী সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও ঘন ঘন বুকে ব্যথা অনুভব করা আয়রনের ঘাটতির একটি লক্ষণ হতে পারে।
উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো যদি আপনি অনুভব করেন, তাহলে তা অবহেলা না করে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে আয়রনের ঘাটতিজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হন এবং কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।