স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এবং যারা নিয়মিত ডায়েট করছেন, তাদের অনেকেই সকালের নাস্তায় এক গ্লাস তাজা ফলের রস পান করতে পছন্দ করেন। কমলালেবু, আনারস বা বেদানার মতো ফলের রস পান করে তারা মনে করেন যে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করছেন। তবে ভারতীয় চিকিৎসক বিশাখা শিবদাসানির মতে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তিনি মনে করেন, এক গ্লাস ফলের রস পান করা আর এক গ্লাস সোডা জাতীয় কোমল পানীয় পান করার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
ডাঃ শিবদাসানি জানান, ২৪০ মিলিলিটারের মিষ্টি কোমল পানীয়তে প্রায় ১১০ ক্যালোরি এবং ২০-২৬ গ্রাম পর্যন্ত চিনি থাকে। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, একই পরিমাণ তাজা ফলের রসেও প্রায় সমপরিমাণ চিনি বিদ্যমান। শুধু প্যাকেটজাত নয়, টাটকা ফলের রসেও চিনির মাত্রা যথেষ্ট বেশি থাকে।
ফলের রসে কেন থাকে এত চিনি?
প্রাকৃতিকভাবে ফলে গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ ও সুক্রোজের মতো কার্বোহাইড্রেটের উপাদান থাকে। যখন আমরা একটি ফল খাই, তখন সেটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে তার পুষ্টি উপাদান শরীরে সরবরাহ করে। এই প্রক্রিয়ায় ফলের উপকারী ফাইবারও আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। কিন্তু যখন ফল থেকে শুধু রসটুকু বের করে নেওয়া হয়, তখন সেই রসের মধ্যে আর কোনো উপকারী ফাইবার অবশিষ্ট থাকে না। ফাইবারের পরিবর্তে রয়ে যায় শুধু ফ্রুকটোজ, গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ – যা আদতে চিনিরই সমান।
ফলের রস পানে যেসব ক্ষতি হতে পারে:
সকালে মাত্র এক গ্লাস ফলের রস পান করার অর্থ হলো প্রায় ২৬ গ্রাম চিনি গ্রহণ করা, যা প্রায় ৬ চা চামচ চিনির থেকেও বেশি। বিশ্বজুড়ে যখন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবারে চিনির পরিমাণ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তখন সকালবেলা স্বাস্থ্যকর খাবার ভেবে এত বেশি চিনি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
চিকিৎসক বিশাখা শিবদাসানির মতে, সকালে ফলের রস পান করলে ওজন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করলে শরীরে যে ধরনের ক্ষতি হয়, তাজা ফলের রস পানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঝুঁকি থাকে। তাই, সকালে ফলের রসের পরিবর্তে গোটা ফল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, যাতে ফলের ফাইবারও শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং চিনির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো যায়।