শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়লে নখ ও চোখেও দেখা দেয় সঙ্কেত! জেনে নিন লক্ষণ

শরীরের সুস্থ কোষ তৈরিতে কোলেস্টেরলের প্রয়োজন হলেও, এর ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) এবং খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) – এই দুই ধরনের কোলেস্টেরলই আমাদের শরীরে থাকে। তবে যখন শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল)-এর মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। মোমের মতো এই কোলেস্টেরল ধমনীর দেওয়ালে এবং তার উপরে জমা হতে শুরু করে।

এর ফলে ধমনীর স্বাভাবিক পথ সরু হয়ে যায় এবং রক্ত প্রবাহ কঠিন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো রক্ত প্রবাহে বাধার কারণে অত্যধিক চাপে ধমনী ছিঁড়ে যেতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক ঘটনার জন্ম দেয়। তাই শরীরে উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।

শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ মানুষই সেগুলোকে সাধারণ শারীরিক সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করে যান। উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে ত্বক, নখ ও চোখেও কিছু বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। চলুন, সেই লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:

নখের কালো দাগ:

ধমনীতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের ফলক জমলে তা সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে নখ সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে। এই কারণে নখে লম্বালম্বি কালো দাগ তৈরি হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে স্প্লিন্টার হেমোরেজ বলা হয়। মেডলাইন প্লাসের তথ্য অনুযায়ী, এই ক্ষেত্রে নখের নিচে পাতলা, লাল থেকে লালচে বাদামি রঙের রেখা দেখা যেতে পারে। নখে এ ধরনের কোনো অস্বাভাবিক দাগ দেখলে দ্রুত সতর্ক হন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ত্বকে ফুসকুড়ি:

রক্ত প্রবাহে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ত্বকের নিচে ফ্যাটি জমাট তৈরি করতে পারে। এর ফলে ত্বকে ফুসকুড়ির মতো ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে যন্ত্রণাদায়ক কমলা বা হলুদাভ রঙের ব্রণের মতো ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, ত্বকের এই ধরনের সমস্যা চোখের কোণে, হাতের তালুতে বা পায়ের পেছনের দিকে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতে পারে। ত্বকে এই ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখলে তা একেবারেই অবহেলা করবেন না।

চোখে হলুদ দাগ:

জ্যানথেলাসমা বা জ্যানথেলাসমা প্যালপেব্রামের (এক্সপি)-এর কারণে চোখের পাতার কোণে অথবা নাকের পাশে ছোট ছোট হলুদ দাগের সৃষ্টি হতে পারে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ত্বকের নিচে কোলেস্টেরল জমা হয়ে জ্যান্থেলাসমা তৈরি করে। স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানাচ্ছে, ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া (উচ্চ কোলেস্টেরল) ও থাইরয়েডের সমস্যার মতো অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণেও জ্যান্থেলাসমা হতে পারে। চোখের আশেপাশে এই ধরনের হলুদ দাগ দেখা গেলে তা উচ্চ কোলেস্টেরলের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে তা অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy