আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত নিজের শরীরের প্রতিটি ছোটখাটো পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রাখা। অনেক সময় আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হওয়া কিছু লক্ষণ আসলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এই লেখায় তেমনই কিছু অস্বাভাবিক শারীরিক লক্ষণ তুলে ধরা হলো। যদি আপনি এই ধরনের কোনো লক্ষণ নিজের মধ্যে দেখতে পান, তাহলে আর দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
১. চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল:
যদি আপনার চোখের নিচে ঘন ডার্ক সার্কেল বা কালো দাগ দেখা যায়, তাহলে বিষয়টি হালকাভাবে নেবেন না। এটি মূলত পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের কারণে হতে পারে, যা পরবর্তীতে আরও অনেক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই প্রতিদিন রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। এছাড়াও, অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা এবং এ জাতীয় অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল দেখা দিতে পারে। শরীরে রক্তের লোহিত কণিকার সংখ্যা কমে গেলে এই লক্ষণ প্রকাশ পায়।
২. আঙুলের রং বদল:
আপনার হাতের ও আঙুলের স্বাভাবিক রং যদি প্রায়ই পরিবর্তিত হতে দেখেন, তবে অবশ্যই সতর্ক হোন। কারণ এটি কোনো মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। তাই এই ধরনের অস্বাভাবিকতা নজরে এলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
৩. ঝাপসা দৃষ্টি:
বিভিন্ন সময়ে আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ করে ঝাপসা হয়ে আসা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। এটি কেবল চোখের সমস্যার কারণে নয়, শরীরের অন্য কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। এমনকি এটি কোনো গুরুতর রোগ বা অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়।
৪. চোখে বিন্দু দেখা:
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে কোনো অযাচিত আলো বা বিন্দুর উপস্থিতি থাকে না। কিন্তু আপনি যদি চোখের সামনে বা দৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ করে অসংখ্য ছোট ছোট বিন্দু বা কালো দাগ ভাসতে দেখেন, তাহলে তা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। এই ধরনের লক্ষণ যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, তাহলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৫. পেটে অস্বাভাবিক শব্দ:
খাবার হজমের সময় পেটে সামান্য গুড়গুড় শব্দ হওয়া স্বাভাবিক। তবে এর একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। যদি আপনি আপনার পেটে অস্বাভাবিক ও একটানা শব্দ অনুভব করেন, তাহলে সতর্ক হোন। এটি অন্ত্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
৬. ত্বকের বহিরাংশ উঠে যাওয়া:
ত্বকের উপরিভাগের চামড়া ওঠা কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়। যদি আপনার এমনটা প্রায়ই ঘটে, তাহলে সতর্ক হন। সাধারণত শরীরে ভিটামিনের অভাব হলে এমনটা হতে পারে। তাই পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। যদি এতেও সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত কারণও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
৭. ঘ্রাণশক্তি লোপ:
যে কোনো জিনিসের গন্ধ স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নাক গ্রহণ করতে সক্ষম। ঠাণ্ডা লাগলে বা অন্য কোনো সাধারণ কারণে সাময়িকভাবে ঘ্রাণে বাধা আসতে পারে। তবে যদি কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই আপনার ঘ্রাণশক্তি লোপ পায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এটি স্নায়বিক বা অন্য কোনো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৮. চোখের অস্বাভাবিক পলক:
স্বাভাবিকভাবে আমাদের চোখ প্রতি কয়েক সেকেন্ড পর পর পলক ফেলে। কিন্তু আপনার চোখের পলক ফেলার হার যদি হঠাৎ করে বেড়ে যায় বা দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি আপনার নার্ভাস সিস্টেমে কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৯. অস্বাভাবিক শব্দ শোনা:
কানে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ শোনা (যেমন – ভোঁ ভোঁ, ঝিঁ ঝিঁ আওয়াজ) নানা কারণে হতে পারে। সময়মতো এর সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা না করালে এই সমস্যা পরবর্তীতে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। তাই কানে অস্বাভাবিক শব্দ অনুভূত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
শরীরের এই অস্বাভাবিক লক্ষণগুলোকে কখনোই হালকাভাবে নেবেন না। দ্রুত সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করার মাধ্যমেই অনেক বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।