গর্ভে সন্তান ধারণের পর থেকেই অনাগত শিশু ছেলে হবে নাকি মেয়ে, এই নিয়ে গর্ভবতী মা থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনের কৌতূহলের শেষ থাকে না। আগে এই বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও, বর্তমানে এটি অনেকটাই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
অনেক সময় বয়স্ক মহিলারা গর্ভবতী মায়ের কিছু লক্ষণ দেখে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে, তা আন্দাজ করার চেষ্টা করেন। তবে আধুনিক বিজ্ঞান এই কৌতূহল মেটানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এর মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাফি অন্যতম, যা খুবই সহজ এবং নিরাপদ একটি প্রক্রিয়া। গর্ভবতী মহিলারা যখন আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে আসেন, তখন প্রায় সকলেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান তাদের গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে।
আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে, তা সাধারণত গর্ভাবস্থার ২০-২২ সপ্তাহ থেকেই প্রায় নির্ভুলভাবে জানা যায়।
তবে এবার এক নতুন তথ্য সামনে এনেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার গবেষক রবি রত্নাকরণ। কানাডার মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ দেখেই নাকি বোঝা যাবে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে! তার গবেষণা অনুসারে, যদি গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ প্রসবের আগে কম থাকে, তাহলে সাধারণত তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। আর যদি মহিলার রক্তচাপ বেশি থাকে, তাহলে পুত্র সন্তানের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গবেষক রবি রত্নাকরণের নেতৃত্বাধীন একটি দল ২০০৯ সাল থেকে চীনের লুইয়াং শহরে গত সাত বছর ধরে ৩৩৭৫ জন গর্ভবতী মহিলার ওপর এই পরীক্ষা চালিয়েছে। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৬৯২ জন মহিলার প্রসবের আগের রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং গ্লুকোজের মূল্যায়ন করা হয়। এই মহিলাদের মধ্যে ৭৩৯ জন পুত্র সন্তান এবং ৬২৭ জন কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পরই গবেষক দল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
চিকিৎসক রবি রত্নাকরণ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘গর্ভবতী মহিলার প্রসবের আগের রক্তচাপের ওঠানামা অনেক কিছুই নির্দেশ করে। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা করে দেখেছি যে, যদি প্রসবের আগে গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কমে যায়, তাহলে তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। আর যাদের রক্তচাপ তুলনামূলকভাবে অনেকটা বেড়ে যায়, তাহলে তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন।’
এই গবেষণা নিঃসন্দেহে গর্ভবতী মা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কৌতূহল কিছুটা হলেও মেটাতে সাহায্য করবে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য শুধুমাত্র রক্তচাপের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। আলট্রাসনোগ্রাফির মতো প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এক্ষেত্রে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।