পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে একাধিক সমস্যা হতে পারে। বয়স ৩০ পেরোনোর পর এই হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, কামবাসনা কমে যাওয়া, লিঙ্গোত্থানে সমস্যা, খারাপ মেজাজ এবং মনোযোগের অভাবের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে কিছু খাবার নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাসের মাধ্যমেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এই প্রতিবেদনে এমন কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হলো, যা পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে:
১. মধু: মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক নিরাময়কারী উপাদান বোরোন। এই খনিজ উপাদান টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে এবং নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। নাইট্রিক অক্সাইড ধমনী সম্প্রসারণ করে লিঙ্গোত্থানে শক্তি যোগায়।
২. বাঁধাকপি: এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এছাড়াও এতে আছে ইনডোল থ্রি-কার্বিনল নামক উপাদান। এই উপাদানটি স্ত্রী হরমোন ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমিয়ে টেস্টোস্টেরনকে আরও বেশি কার্যকর করে তোলে।
৩. রসুন: রসুনের অ্যালিসিন যৌগ মানসিক চাপের হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে টেস্টোস্টেরন ভালোভাবে কাজ করতে পারে। ভালো ফল পেতে কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৪. ডিম: ডিমে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, কোলেস্টেরল এবং প্রোটিন। টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরির জন্য এই উপাদানগুলো অত্যন্ত জরুরি।
৫. কলা: এই ফলে থাকা ব্রোমেলিন এনজাইম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে শক্তি সরবরাহের উৎস হিসেবে কাজ করে।
৬. কাঠবাদাম: নারী এবং পুরুষ উভয়ের যৌনাকাঙ্ক্ষার জন্য প্রতিদিন এক মুঠো কাঠবাদাম যথেষ্ট। এই বাদামে রয়েছে জিঙ্ক, যা টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ায় এবং কামবাসনা বৃদ্ধি করে।
৭. ঝিনুক: টেস্টোস্টেরন তৈরিতে জিঙ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ঝিনুকে প্রচুর পরিমাণে এই খনিজ উপাদানটি বিদ্যমান। যারা ঝিনুক পছন্দ করেন না, তারা বিকল্প হিসেবে চিজ বা পনির খেতে পারেন। বিশেষ করে সুইস এবং রিকোত্তা চিজ এক্ষেত্রে ভালো বিকল্প হতে পারে।
৮. টক ফল: ‘স্ট্রেস হরমোন’ কমানোর পাশাপাশি টকজাতীয় ফলে রয়েছে ভিটামিন এ। এই ভিটামিন টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে প্রয়োজন হয়। এছাড়াও এটি ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমায়, যার ফলে পুরুষ হরমোন ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
৯. পালংশাক: এটি প্রমাণিত যে পালংশাক শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে পারে। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই রয়েছে। এই উপাদানগুলো টেস্টোস্টেরন তৈরির জন্য অপরিহার্য।
১০. আঙুর: হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন এক থোকা লাল আঙুর খেলে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, শুক্রাণুর তৎপরতা উন্নত হয় এবং তা শক্তিশালী হয়।
১১. ডালিম: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইম্পোটেন্স রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, যৌন দুর্বলতায় ভোগা পুরুষদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ যারা প্রতিদিন ডালিমের রস পান করেন, তাদের অবস্থার উন্নতি দেখা গেছে।
১২. মাংস: সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যারা একেবারেই মাংস খান না, তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম থাকে। তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার আগে সাবধান থাকা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি খাবারে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
তবে মনে রাখা জরুরি, শুধু খাবারের মাধ্যমেই টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি সম্পূর্ণভাবে পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। যদি শরীরে এই হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত কম থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।