পায়ের আঙুলের ফাঁকে ঘা? ঘরোয়া উপায়েই মিলবে মুক্তি!

অনেকেরই পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে চুলকানি ও ঘা দেখা যায়। এই সমস্যাটি ‘অ্যাথলেটের পা’ নামে পরিচিত, যার চিকিৎসা পরিভাষায় নাম ‘টিনিয়া পেডিস’। এটি মূলত এক ধরনের ছত্রাকঘটিত ত্বকের সংক্রমণ, যা সাধারণত পায়ের আঙুলের মধ্যবর্তী অংশে হয়ে থাকে।

এই সংক্রমণে আক্রান্ত স্থানে চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা তীব্র যন্ত্রণা ও জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে। এমনকি এর থেকে ফোসকা ও ঘা-ও হতে পারে, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। তবে অ্যাথলেট পায়ের ক্ষত খুব বেশি না হলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে এর চিকিৎসা করা সম্ভব। জেনে নিন সেই উপায়গুলি:

হাইড্রোজেন পারক্সাইড: হাইড্রোজেন পারক্সাইড ছত্রাক মারতে অত্যন্ত কার্যকর। সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত দিনে দুবার আক্রান্ত স্থানে এটি ব্যবহার করুন।

টি ট্রি অয়েল: টি ট্রি অয়েলে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যা দাদ এবং ক্যানডিডিয়াসিসের মতো ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। ২০০২ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন চা গাছের তেল ব্যবহার করলে অ্যাথলেট পায়ের সমস্যা দ্রুত সেরে যায়। এক্ষেত্রে সামান্য নারকেল তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে দিনে দুবার ব্যবহার করুন।

নিম তেল: নিম তেলও অ্যাথলেট পায়ের সমস্যায় বেশ উপকারী। এতেও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দিনে ২-৩ বার আক্রান্ত স্থানে নিমের তেল বা নিমের নির্যাস লাগাতে পারেন।

রসুন: অ্যাথলেট পায়ের ঘরোয়া চিকিৎসায় রসুন ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ৭ দিন দিনে দুবার আক্রান্ত স্থানে রসুনের নির্যাস ব্যবহারে ৭৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর সুস্থতা লাভ করেছেন।

ট্যালকম পাউডার বা বেবি পাউডার: পায়ের আঙুলের ফাঁকে ট্যালকম পাউডার, কর্ন স্টার্চ বা বেবি পাউডার ব্যবহারেও এই ঘা সারাতে সাহায্য পাওয়া যায়। এই পাউডার ঘাম ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ছত্রাকের বৃদ্ধি ও বিস্তারকে কঠিন করে তোলে। পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে পাউডার লাগিয়ে মোজা পরুন।

পাশাপাশি, এই সমস্যা প্রতিরোধের জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:

পা সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন। ত্বকের আর্দ্র স্থানেই ছত্রাকের বৃদ্ধি বেশি হয়।
নিয়মিত মোজা পরিবর্তন করুন।
বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই পা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন এবং পায়ের আঙুলের ফাঁক ভালোভাবে শুকনো করুন।
পাবলিক পুল বা জিমে খালি পায়ে হাঁটবেন না।
খুব টাইট ফিটিং জুতা পরিহার করুন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

ঘরোয়া চিকিৎসা করার পরেও যদি অ্যাথলেট পায়ের সমস্যা না কমে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ যেকোনো ধরনের সংক্রমণ গুরুতর হতে পারে। এছাড়াও, অ্যাথলেট পায়ের সংক্রমণ অত্যন্ত সংক্রামক। এটি সহজেই আপনার হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি আক্রান্ত স্থানে চুলকান। এই ছত্রাক নখের নীচের অংশে এবং এমনকি কুঁচকির অঞ্চলেও সংক্রমিত করতে পারে, যার চিকিৎসা করা আরও কঠিন হতে পারে।

সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে আপনার প্রেসক্রিপশনের অ্যান্টিফাঙ্গাল (ওরাল বা টপিক্যাল) প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষত যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে এই সংক্রমণ থেকে ডায়াবেটিক ফুট আলসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

যদি আক্রান্ত স্থানে লালভাব, পুঁজ, ফোলাভাব, তরল নিঃসরণ ও জ্বর দেখেন অথবা আপনার ডায়াবেটিস থাকে (যেক্ষেত্রে স্নায়ুর ক্ষতির কারণে পায়ে ব্যথা অনুভূত নাও হতে পারে), তাহলে প্রথম দিকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy