ত্বকের রং বদলানো কি স্বাভাবিক? শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা হতে পারে কঠিন রোগের লক্ষণ

ত্বকের স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন মোটেও হালকাভাবে নেওয়ার মতো বিষয় নয়। হঠাৎ করেই ত্বকের রং কালো বা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া মারাত্মক রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার অন্যতম লক্ষণ হলো ত্বকের রঙের পরিবর্তন। শরীরের জন্য রক্ত জমাট বাঁধা একটি জরুরি প্রক্রিয়া হলেও, অতিরিক্ত রক্ত যদি শিরার মধ্যে জমাট বাঁধতে শুরু করে, তবে তা জীবনহানিকর হতে পারে।

সাধারণত কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধের জন্য রক্ত জমাট বাঁধে। তবে যদি কোনো কারণ ছাড়াই শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে, তবে তা উদ্বেগের কারণ। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর অন্তত এক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার কারণে। এমনকি ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এই শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা। তাই শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে সকলের অবগত থাকা জরুরি।

ধূমপান ও উচ্চ রক্তচাপ রক্ত জমাট বাঁধার অন্যতম প্রধান কারণ, যা নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। এছাড়াও, অনেকের ক্ষেত্রে গুরুতর কোনো শারীরিক অসুস্থতাও শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের মতো ওষুধও রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার আগে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা আগে থেকে জানা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।

রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ:

সাধারণত পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেশি থাকে। এর ফলে পায়ের টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়। তবে অনেক সময় রক্ত জমাট বাঁধার তেমন সুস্পষ্ট সংকেত পাওয়া যায় না। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা হলে প্রাথমিকভাবে শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যাওয়া, ক্লান্তি, অতিরিক্ত ঘাম, শ্বাসকষ্ট এবং মাথা ঘোরা এর সাধারণ লক্ষণ। দীর্ঘক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পরেও যদি ক্লান্তি না কমে, তবে এটি একটি গুরুতর সতর্ক সংকেত হতে পারে।

শরীরে ফোলাভাব, বিশেষ করে পায়ে, এবং একই সাথে পায়ের ত্বকের রঙের পরিবর্তন ও তাপমাত্রার পরিবর্তনও রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হতে পারে। শরীরে যদি দীর্ঘ সময় ধরে হালকা জ্বর থাকে, তবে এটি ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের লক্ষণ হতে পারে।

এছাড়াও, ত্বকের গভীরে কোনো ক্ষত এবং শরীরের কোষে রক্ত পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি হলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত। শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশে ফোলাভাব এবং সেই স্থানটি গরম অনুভূত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

অনেক সময় শরীরের ডিটক্সিফিকেশন (দূষণমুক্তকরণ) সঠিকভাবে না হলে রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, শরীরের কোথাও গুরুতর আঘাত পেলে বা মস্তিষ্কে আঘাত লাগলে শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।

মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হলে, অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধলে মাথা ঘোরা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, কথা বলতে অসুবিধা এবং স্মৃতিভ্রমের মতো সমস্যা হতে পারে। এমনকি খিঁচুনিও হতে পারে এবং এর ফলে গুরুতর স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তাই, শরীরে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy