কী কী দেখে বুঝবেন যে আপনার শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব হয়েছে?

ভিটামিন সি-এর স্বল্পতায় বেশিরভাগ ভারতীয় মহিলাই ভোগেন। সমস্যা হচ্ছে, তার লক্ষণগুলি প্রাথমিক অবস্থায় মোটেই খুব সিরিয়াস থাকে না। সেগুলিকে উপেক্ষা করতে করতে এমন একটা পর্যায় আসে যখন ক্রনিক অ্যানিমিয়া হয়ে যায়, দেখা দেয় অন্য নানা উপসর্গ। মনে রাখতে হবে যে, আমাদের শরীরে ভিটামিন সি জমিয়ে রাখা যায় না। রোজের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে এই ভিটামিন থাকা একান্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিন সি আপনাকে ভিতর থেকে সুস্থ রাখে, বাড়ায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিড্যান্টও বটে। তা ফ্রি র‍্যাডিকালস ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের হাত থেকে বাঁচায় আমাদের। বাড়ায় লিম্ফোসাইট বা শ্বেতকণিকার সংখ্যা, তা যে কোনও রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও সমর্থ হয়। তা ছাড়া, শরীরে লোহার শোষণের জন্যও ভিটামিন সি একান্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁরা যদি যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি না গ্রহণ করেন, তা হলে কিন্তু উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে শরীর লৌহ কণিকা শোষণ করতে পারে না।

ভিটামিন সি কোলাজেন সিন্থেসিসের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় এবং তা ত্বক টানটান রাখতেও সাহায্য করে। জানেন কি, বয়স বাড়লে মানুষ স্মৃতিভ্রম ও হাড়ের স্বাস্থ্যক্ষয়গোছের যে ধরনের সমস্যায় ভোগে, তা ঠেকিয়ে রাখতে পারে ভিটামিন সি? তাই রোজের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই লেবু, পেয়ারা,আমলকী, পেঁপে, টোম্যাটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি, কিউয়ির মতো ফল অবশ্যই রাখা উচিত। ফল-সবজি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে কাঁচাই খান। কারণ বেশি উত্তাপে ভিটামিন সি-র সব গুণ নষ্ট হয়ে যায়।

কী কী দেখে বুঝবেন যে আপনার শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব হয়েছে?
শুকনো, খসখসে, অমসৃণ ত্বক: ভিটামিন সি-এর অভাব প্রথম টের পাওয়া যায় ত্বকের স্বাস্থ্যহানি হলে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের প্রভাবে ঘাটতি আসে কোলাজেন সিন্থেসিসে। ফলে ত্বকের একেবারে বাইরের স্তর বা এপিডার্মিস ক্রমশ অনুজ্জ্বল ও পাতলা হয়ে পড়ে। এই প্রথম স্তরের নিচে যে রক্তজালক থাকে, তার ক্ষয় শুরু হয়। দীর্ঘদিন এই ভিটামিনের অভাবে ভুগতে আরম্ভ করলে ক্ষত নিরাময় হতেও অনেক বেশি সময় লাগবে।

দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যহানি: ভিটামিন সি-র অভাবে দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যহানি হতে আরম্ভ করে ব্যাপকভাবে। দাঁতের গোড়ায় ক্যালসিয়াম জমতে আরম্ভ করে উলটোদিকে আবার মাড়ি দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দাঁত পড়তে আরম্ভ করে সময়ের আগেই।

বারবার ঠান্ডা লাগা, ইনফেকশন: আপনার কি প্রতি সিজ়ন চেঞ্জেই একবার করে ঠান্ডা লাগে? ভিটামিন সি-র অভাবই সম্ভবত এর কারণ। এই আবশ্যক ভিটামিনের অভাবে লিম্ফোসাইট বা শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি হতে পারে না, কোনও জীবাণুর আক্রমণ ঠেকানোর মতো তেজও থাকে না শরীরের। ফলে আপনি বারবার রোগে ভোগেন।

দুর্বল হাড়: ভিটামিন সি-এর স্বল্পতা আপনার হাড়কেও দুর্বল ও ভঙ্গুর করে দেবে। বার বার হাড় ভাঙতে পারে, বেড়ে যায় অস্টিওপোরোসিসের আশঙ্কাও। বাচ্চাদের ভিটামিন সি-এর অভাব হলে তো আরও সমস্যা, কঙ্কাল বা হাড়ের স্ট্রাকচার তৈরির সময়েই খামতি রয়ে যাবে।

অ্যানিমিয়া কখনওই আপনার পিছু ছাড়বে না: লোহা সমৃদ্ধ খাবার, সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরেও অ্যানিমিয়া আপনার পিছু ছাড়ছে না? তা হলে কিন্তু ভেবে দেখা উচিত ভিটামিন সি-র স্তরে কোনও খামতি থেকে যাচ্ছে কিনা। যদি দেখেন যে ক্লান্তিবোধ আপনাকে গ্রাস করে নিচ্ছে, ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছেন, মাথা ব্যথা হচ্ছে ঘন ঘন, দুর্বল হয়ে পড়ছে নখের স্বাস্থ্য – তা হলে অতি অবশ্যই ভিটামিন সি বেশি করে খেতে হবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy