আজকালকার ব্যস্ত জীবনে নিজের জন্য একটু সময় বের করা সত্যিই কঠিন। এই কারণে আমাদের ভেতরের প্রাণশক্তি যেন ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, বাড়ছে অলসতা। দিনের শেষে মাথা ব্যথা এবং ক্লান্তি যেন নিত্যসঙ্গী। তবে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, যদি দিনের শেষে অন্তত ৩০ মিনিট নিজের জন্য বের করে হাঁটার অভ্যাস করা যায়।
বাইরে যাওয়া সম্ভব না হলে আপনার বাড়ির ছাদ বা বাগানেও এই সময়টুকু হাঁটতে পারেন। মনে রাখবেন, এই ৩০ মিনিট কোনো রকম কঠিন ব্যায়াম নয়, শুধুমাত্র হাঁটার জন্যই বরাদ্দ রাখুন। কিন্তু কেন হাঁটার উপর এত জোর দেওয়া হচ্ছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক এর ৫টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
১. পেশি সক্রিয় রাখে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়:
নিষ্ক্রিয় থাকার অর্থ হলো শরীরে পেশীর শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া। যখন আমরা হাঁটি, তখন আমাদের গোটা শরীরের পেশিগুলি সঞ্চালিত হয়। এর ফলে মস্তিষ্কে বিশেষ অণুর মাধ্যমে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হাঁটার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো আরও ভালোভাবে বিকশিত হতে পারে।
২. সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করে:
যখন কোনো সমস্যা নিয়ে চিন্তিত বা হতাশ হয়ে এক জায়গায় বসে থাকেন, তখন সেই সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর পরিবর্তে একটু হেঁটে এলে দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হাঁটা আমাদের সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।
৩. হজমক্ষমতা বাড়ায়:
মানুষের পরিপাকতন্ত্রের জন্য হাঁটার চেয়ে ভালো ওষুধ আর কিছু হতে পারে না। রাতের খাবার বা দিনের প্রধান খাবার গ্রহণের পর কিছুক্ষণ হাঁটা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনও হয় না।
৪. ব্যক্তিত্বের ইতিবাচক পরিবর্তন আনে:
আমাদের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক রয়েছে এবং সক্রিয় থাকার সঙ্গে সেগুলোর গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। গবেষণা বলছে, যারা নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন করেন, তারা তুলনামূলকভাবে কম উদার হন এবং তাদের স্নায়ুজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। অন্যদিকে, সক্রিয় জীবনযাপন এবং নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি দিতে পারে।
৫. বিষণ্ণতা কমায়:
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সঙ্গে বিষণ্ণতার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের ব্যায়াম হয় এবং মনও প্রফুল্ল থাকে, যা বিষণ্ণতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং, দিনের শেষে মাত্র ৩০ মিনিটের এই সহজ অভ্যাসটি আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। অলসতাকে বিদায় জানান এবং সুস্থ জীবনের পথে এক পা বাড়ান!