গরমে বাড়ছে ঝুঁকি! ফুড পয়জনিং এড়াতে জানুন লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

গ্রীষ্মের আগমন মানেই নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার হাতছানি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়ে ই-কোলি, সালমোনেলার ও নোরোভাইরাসের মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কারণে ফুড পয়জনিং বা খাদ্য বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ই-কোলির মতো ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। ফলে বাইরে দীর্ঘক্ষণ রাখা খাবার খেলে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

ফুড পয়জনিং এর প্রধান লক্ষণ:

খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অসুস্থতা, বমি বমি ভাব এবং বমির মতো সমস্যা অনুভব করেন। এর পাশাপাশি ডায়রিয়া ও পেট ফাঁপার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে খুব জ্বর, পেশীতে ব্যথা বা ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গও দেখা যেতে পারে। দূষিত খাবার খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে এই লক্ষণগুলো শরীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। বিরল ক্ষেত্রে, উপসর্গ দেখা দিতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

কখন দেখাবেন ডাক্তার:

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্য বিষক্রিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। সাধারণত লক্ষণগুলো কয়েক দিন বাড়তে পারে, তবে এক সপ্তাহ বা তার পরে সেরে যায়। এই সময় শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা জরুরি। তবে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

তীব্র পেটে ব্যথা
দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া (দুই দিনের বেশি)
উচ্চ জ্বর (১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি)
বমির কারণে তরল ধরে রাখতে না পারা
ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ (যেমন প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা)
দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা বা পেশী দুর্বল লাগা
খাদ্য বিষক্রিয়া প্রতিরোধে যা করবেন:

খাদ্য বিষক্রিয়া এড়াতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা অত্যাবশ্যক:

খাবার ভালোভাবে রান্না করুন: মাছ ও মাংস রান্না করার সময় নিশ্চিত করুন যেন তা ভালোভাবে সেদ্ধ হয় এবং কোনো অংশ কাঁচা না থাকে। কম সেদ্ধ বা কাঁচা মাংসে ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর, সালমোনেলা, ই-কোলাই বা ইয়ারসিনিয়ার মতো ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে।

খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন: রান্না করা মাংস ও উচ্ছিষ্ট খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। রান্নার ৯০ মিনিটের মধ্যে মাংস, আলু বা পাস্তার মতো দ্রুত পচনশীল খাবার ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজে রাখা খাবার দু’দিনের বেশি খাবেন না। ফ্রিজের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৪১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তার নিচে আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। ফ্রিজ অতিরিক্ত ভর্তি করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয় এবং খাবার সঠিকভাবে ঠান্ডা হতে পারে না।

সবজির জীবাণু ধ্বংস করুন: ফল ও শাকসবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সালাদ বা ফলমূল প্রবাহিত জলের নিচে রেখে পরিষ্কার করুন। এমনকি যদি শক্ত খোসাযুক্ত ফল বা সবজি হয় যা আপনি খাবেন না, তাও ধুয়ে নেওয়া উচিত। শক্ত চামড়ার ফল ও সবজি পরিষ্কার করার জন্য ভেজিটেবল ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।

কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখুন: কাঁচা মাংস, সামুদ্রিক খাবার, ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা জীবাণু রান্না করা খাবারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এগুলো আলাদাভাবে রাখুন এবং এগুলো ধরার পরপরই সাবান ও জল দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।

হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন: খাবার তৈরি, পরিবেশন ও খাওয়ার আগে এবং পরে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। বাইরে থাকাকালীন অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন, যাতে অন্তত ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে। পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া বা বমি হলে এবং হাতে কোনো কাটা বা ক্ষত থাকলে খাবার পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকুন।

এই সহজ নিয়মগুলো মেনে চললে গ্রীষ্মকালে খাদ্য বিষক্রিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। সুস্থ থাকতে খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy