গরমকাল মানেই ঘাম আর অস্বস্তি। যারা নিয়মিত মোজা ও পা ঢাকা জুতা পরেন, তাদের জন্য এই সময়টা আরও বেশি ভোগান্তির কারণ হতে পারে। গরমে বদ্ধ জুতার মধ্যে পা থাকার কারণে অনেকেরই পায়ে ইনফেকশন বা সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। মোজা খুললেই বের হয় অসহ্য দুর্গন্ধ, যা পায়ের ঘামের কারণে হয়ে থাকে।
এছাড়াও, অতিরিক্ত ঘামের কারণে অনেকের পায়ের আঙুলের নিচের অংশের চামড়া ওঠে বা শক্ত হয়ে যায়। এটি এক ধরনের সংক্রমণ, যা ‘অ্যাথলিটস ফুট’ নামে পরিচিত। তবে এই সংক্রমণে পা খেলোয়াড়ের পায়ের মতো শক্ত না হয়ে বরং পচতে শুরু করে। পা অতিরিক্ত ঘামার কারণেই এমনটি ঘটে এবং এটি এক ধরনের দাদ, যা পায়ের আঙুল থেকে শুরু করে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘামযুক্ত মোজা ও জুতা পরলে গরমে পায়ে দাদ হওয়ার সমস্যা আরও বাড়ে।
কেন হয় এই সংক্রমণ?
জুতা পরার পর পায়ে ক্রমাগত ঘাম হতে থাকে। এই ঘামে ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। এই ব্যাকটেরিয়া পায়ের মৃত ত্বকের সঙ্গে মিশে দুর্গন্ধ তৈরি করে। যদি কারো পায়ে খুব বেশি দুর্গন্ধ হয়, তবে বুঝতে হবে তার পায়ে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছে।
সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যা করবেন:
এই গরমের হাত থেকে আপনার পাকে রক্ষা করতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলুন:
ধোয়া মোজা পরুন: পা শরীরের এমন একটি অংশ যা সবচেয়ে বেশি ঘামে। জুতার সঙ্গে মোজা পরার ফলে ঘাম শোষিত হয় এবং পায়ে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমে। তবে একই মোজা বারবার না পরে প্রতিদিন পরিষ্কার মোজা ব্যবহার করুন। মোজা ধোয়ার ফলে ঘাম দূর হয় এবং জীবাণুর সংক্রমণ এড়ানো যায়।
স্যান্ডেল ব্যবহার করুন: চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘামের আর্দ্রতা পায়ে নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে পায়ে বাতাস লাগানোর জন্য খোলা স্যান্ডেল পরা উচিত। এতে পায়ের পাতায় বাতাস পৌঁছায় এবং ঘা শুষ্ক থাকে। প্রয়োজনে সপ্তাহে অন্তত একদিন জুতা ও মোজার পরিবর্তে স্যান্ডেল বা চপ্পল পরে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
ঢিলেঢালা মোজা পরুন: টাইট মোজা পায়ের রক্ত সঞ্চালনকে ধীর করে দেয়। এছাড়াও আঁটসাঁট মোজা শরীরের তাপ বের হতে বাধা দেয়, যা অতিরিক্ত গরমের কারণ হতে পারে। পায়েরও শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন। সেজন্য কিছু সময় পা খোলা রাখা এবং ঢিলেঢালা মোজা পরা জরুরি।
সঠিক আকারের মোজা: পায়ের মাপের চেয়ে একটু বড় এবং সুতির মোজা পরুন। মোজাগুলো যথেষ্ট নরম হওয়া উচিত যাতে ত্বকে কোনো দাগ না পড়ে। যদি মোজা পরার পর ত্বকে দাগ তৈরি হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার বড় সাইজের মোজা প্রয়োজন।
জীবাণুমুক্তকরণ: একই স্টকিং না ধুয়ে বারবার পরবেন না। এমনকি মোজা ধোয়ার পরেও সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন। ধোয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যেন মোজা থেকে ডিটারজেন্ট ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে। অন্যথায় আক্রান্ত স্থানে ফুসকুড়ি ও জ্বালা হতে পারে। মোজা পরার সময় নিশ্চিত করুন যেন সেগুলো সম্পূর্ণ শুকনো থাকে এবং তাতে কোনো আর্দ্রতা না থাকে।
এই সহজ পদক্ষেপগুলো মেনে চললে গরমকালে পায়ের সংক্রমণ এবং দুর্গন্ধের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আপনার পায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আজ থেকেই সচেতন হন।