হৃদরোগ থেকে বাঁচতে চান? রোজকার জীবনে আনুন এই সহজ পরিবর্তনগুলি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

হৃদরোগ বর্তমানে একটি অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যায় হৃদরোগে। বাংলাদেশেও অল্প বয়সে হৃদরোগে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে, যা সুস্থ জীবনের জন্য হৃদরোগ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে তোলে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদরোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। আর এই ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক নূরুল আলম জানান, যেকোনো শারীরিক নড়াচড়া, যেখানে দেহের ঐচ্ছিক পেশী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ক্যালরি বা শক্তির ব্যয় হয়, সেটাই শারীরিক পরিশ্রম বা ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি।

ব্যায়াম বা শারীরিক শ্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো অতিরিক্ত মেদ বা ক্যালরি ঝরানো। তাই খেলাধুলা, হাঁটাচলা, গৃহস্থালির কাজ, ভ্রমণ, বিনোদনমূলক কাজ কিংবা শরীরচর্চার মতো কাজ প্রতিদিন করা উচিত।

হার্ট সুস্থ রাখতে কোন ধরণের ব্যায়াম বা পরিশ্রম কতটা দরকার?

চিকিৎসকরা বলছেন, হার্টকে সুস্থ রাখতে শারীরিক শ্রম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম – এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। হার্ট সুস্থ রাখার জন্য ঠিক কোন ধরণের পরিশ্রম কতটা করা উচিত, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে। ডাঃ নূরুল আলম পরামর্শ দেন, হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে দ্রুত গতিতে হাঁটা জরুরি। যাদের সময় বা সুযোগের অভাব রয়েছে, তারা কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে হেঁটে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন, অফিসের ভেতরে বা বাড়িতে হাঁটাচলা করতে পারেন অথবা কর্মস্থলে যাওয়ার বা ফেরার সময় গাড়ি কিছুটা দূরে রেখে হেঁটে যেতে পারেন। আসলে সব ধরনের পরিশ্রম বা ব্যায়াম সব বয়সের মানুষের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে, তাই বয়স অনুযায়ী এটি ভিন্ন ভিন্নভাবে করা যেতে পারে।

হার্টের জন্য একটু দ্রুত গতিতে হাঁটা প্রয়োজন, যা হৃদস্পন্দন বাড়াতে সাহায্য করে। হাঁটা ছাড়াও সাঁতার ও সাইক্লিং-এর মতো ব্যায়ামও হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়ক। তবে এটি বয়সভেদে সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। इसीलिए হাঁটাহাঁটির উপরই বেশি জোর দেওয়া হয়।

তবে যাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে অথবা ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা আছে, তাদের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোন পরিশ্রম বা ব্যায়াম তাদের জন্য কার্যকর হবে তা নির্ধারণ করে নেওয়া উচিত।

কোন বয়সে কতটুকু শারীরিক পরিশ্রম প্রয়োজন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, কিশোর বয়সে (৫-১৭ বছর) প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা ভালোভাবে শারীরিক পরিশ্রম করা দরকার। এই বয়সে পেশী ও হাড়কে শক্তিশালী করে এমন কোনো ব্যায়াম বা শরীরচর্চা সপ্তাহে অন্তত তিনবার করা উচিত। এক্ষেত্রে খেলাধুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অন্যদিকে, আঠারো বছরের বেশি বয়সীদের আরও উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রম করা প্রয়োজন। তাদের মাঝারি ও উচ্চমাত্রার ব্যায়াম বা শরীরচর্চার মতো কাজে বেশি সময় দেওয়া উচিত। একই সাথে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী হাড় শক্তিশালী করে এমন ব্যায়াম সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার করা দরকার।

সুতরাং, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা অপরিহার্য। আপনার বয়স এবং শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী সঠিক ধরনের ব্যায়াম বেছে নিন এবং একটি সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে যান।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy