সুস্থ হাড় গঠন কেবল সুস্বাস্থ্যের জন্যই নয়, জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শৈশব, কৈশোর এবং তারুণ্যের খাদ্য habits-এর মাধ্যমেই বিভিন্ন খনিজ পদার্থ হাড়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। একসময় যখন আমরা ত্রিশের কোঠায় পা রাখি, তখন আমাদের হাড়-ভর (bone mass) সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়। এই সময়ের মধ্যে যদি কোনো কারণে পর্যাপ্ত হাড়-ভর তৈরি না হয়, অথবা পরবর্তীতে হাড়-ভর হ্রাস পায়, তাহলে হাড়-ভঙ্গুরতা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়তে থাকে, যার ফলে হাড় সহজে ভেঙে যেতে পারে।
অনেকেরই ধারণা শরীরের হাড় মানেই খুব শক্ত, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কিছু বিশেষ কারণে মানুষের শরীরের হাড় খুবই নরম বা ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। অস্টিওপোরোসিস হাড়ের রোগের মধ্যে অন্যতম। এই রোগে আক্রান্তদের হাড় ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। তবে অবাক করার বিষয় হলো, কিছু খাবারও এই হাড় ক্ষয়ের জন্য দায়ী হতে পারে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো আপনার শরীরের হাড় ক্ষয়ের কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার: অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার মানব শরীরের হাড়কে দুর্বল করে দেয়। লবণ, অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড, শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের করে দেয়। এর ফলে হাড় হয়ে পড়ে ভঙ্গুর বা ক্ষয়িষ্ণু। শুধু খাবারে মেশানো লবণই নয়, ফাস্ট ফুড, কাঁচা খাবার, সালাদ কিংবা চিপসে মেশানো লবণও আপনার হাড়ের জন্য মারাত্মক হতে পারে। তাই লবণের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
কোমল পানীয়: একটু ভরপেট খাওয়া হলেই অনেকেই সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয়ের জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। কিন্তু জেনে রাখা ভালো, এই কোমল পানীয় প্রতিনিয়ত হাড় ক্ষয় করে চলেছে। এই সমস্ত কোমল পানীয়তে থাকা ফসফরিক অ্যাসিড মানুষের প্রাকৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেহের ক্যালসিয়াম দূর করে দেয়। আর ধীরে ধীরে হাড় হয়ে ওঠে ক্ষয়িষ্ণু। তাই কোমল পানীয় পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অতিরিক্ত চা ও মাংস: অনেকেরই চা পানের নেশা থাকে। দিনে এক-দুই কাপ চা শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়, বরং উপকারী। তবে এর বেশি পরিমাণে চা পান করলে শরীরে অধিক মাত্রায় ক্যাফেইন প্রবেশ করে। যা হাড়ের ক্ষয়ের জন্য দায়ী হতে পারে। অন্যদিকে, প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যাদের মাংস অত্যাবশ্যক, তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো, মাংসে থাকা অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে থাকা ক্যালসিয়ামকে কাজ করতে বাধা দেয়। ফলে হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তৈরি হয় এবং এক সময় হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই মাংসের পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
সুস্থ হাড় গঠনের জন্য শৈশব থেকেই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অপরিহার্য। হাড় ক্ষয়কারী খাবারগুলো পরিহার করে এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে আমরা আমাদের হাড়কে মজবুত রাখতে পারি এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমাতে পারি।