প্রকৃতিতে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তেমনই একটি উপকারী ভেষজ হল নিম। নিমের পাতা, যা তার তিক্ত স্বাদের জন্য পরিচিত, আসলে একাধিক ঔষধি গুণে ভরপুর। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিমে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যা ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং এর ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমতে পারে। এছাড়াও, এটি লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতেও সহায়ক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫টি তাজা নিমপাতা চিবোনো রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকর প্রাকৃতিক পদ্ধতি হতে পারে। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি প্রায় সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন। নিমে উপস্থিত ফাইটোকেমিক্যাল নামক উপাদান ইনসুলিন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে দিল্লির এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. আর. কে. শর্মা বলেন, “নিমপাতা রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, কারণ এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে।” তবে তিনি একইসাথে সতর্ক করে বলেন, “নিমপাতাকে কখনোই ডায়াবেটিসের নির্ধারিত ওষুধের বিকল্প হিসেবে দেখা উচিত নয়। এটি শুধুমাত্র একটি পরিপূরক ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।”
তবে, মনে রাখা জরুরি যে কোনো কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত নিমপাতা খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, যাদের নিমের প্রতি অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের অবশ্যই এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
শুধু পাতাই নয়, নিম দিয়ে তৈরি চাও স্বাস্থ্যকর পানীয় হতে পারে। ৭-৮টি নিমপাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল ছেঁকে নিয়ে সকালে খালি পেটে পান করলে হজমক্ষমতা বাড়ে এবং শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর হয়। এছাড়া, ১-২ চামচ তাজা নিমের রস নারকেল জল বা সাধারণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
নিম কেবল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না, ত্বক, হজমতন্ত্র, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং লিভার ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে কোনো ঘরোয়া পদ্ধতি শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক দিকগুলি বিবেচনা করে চিকিৎসকই সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
পরিশেষে বলা যায়, নিম একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বহু উপকার বয়ে আনতে পারে। তবে এর সঠিক ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।