সন্তানকে ঠিকমতো খাওয়ানো যেন আজকালকার মায়েদের কাছে এক কঠিন যুদ্ধ। প্রায় প্রতিটি শিশুই খাবার নিয়ে নানা রকম বায়না করে, যার ফলে তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবকই শিশুদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য বাজারের বিভিন্ন প্রোটিন পাউডার বেছে নেন।
তবে দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রোটিন পাউডারগুলো নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। বাজারে উপলব্ধ বেশিরভাগ প্রোটিন পাউডারেই কৃত্রিম ফ্লেভার এবং প্রিজারভেটিভের মতো উপাদান থাকে, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষত, শিশুদের দৈনিক কতটা প্রোটিনের প্রয়োজন, তা জানা প্রত্যেক অভিভাবকের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা তাদের বয়স, শারীরিক কার্যকলাপ এবং লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে, এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১৩ গ্রাম প্রোটিন, চার থেকে আট বছর বয়সীদের ১৯ গ্রাম, নয় থেকে তেরো বছর বয়সীদের ৩৪ গ্রাম এবং চৌদ্দ থেকে আঠেরো বছর বয়সীদের প্রায় ৫০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কখন শিশুদের প্রোটিন পাউডার দেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যখন শিশুরা তাদের স্বাভাবিক খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে না, তখনই প্রোটিন পাউডারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে শিশুদের প্রোটিন পাউডার খাওয়ানোর আগে অবশ্যই পুষ্টিবিদ বা শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রিজারভেটিভযুক্ত প্যাকেজজাত প্রোটিন পাউডার নিয়মিত সেবনের ফলে কিডনিতে পাথর, লিভারের সমস্যা, হৃদরোগ এবং হাড়ের রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রোটিনের প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে অন্যতম হলো টাটকা মাংস, তৈলাক্ত মাছ, ডিম, তাজা দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং বিভিন্ন সবজি যেমন ডাল, পালংশাক ও ব্রকলি।
তবে বাজারের প্রোটিন পাউডার নিয়ে উদ্বেগ থাকলে, ঘরে বসেই স্বাস্থ্যকর প্রোটিন পাউডার তৈরি করা সম্ভব। আসুন, দেখে নেওয়া যাক সেই পদ্ধতি:
একটি ব্লেন্ডারে তিন কাপ গুঁড়ো দুধ, এক কাপ ওটস, এক কাপ বাদাম এবং পরিমাণ মতো গুড়, চিনি বা সুইটনার নিন। এরপর এই মিশ্রণটিকে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে মিহি পাউডার তৈরি করুন। পাউডারটি একটি পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করুন। দীর্ঘ সময় ধরে এটি ভালো রাখতে চাইলে পাত্রটি ফ্রিজে রাখতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়িতে তৈরি এক চামচ প্রোটিন পাউডারে প্রায় ১৮০ ক্যালোরি এবং ১২ গ্রাম প্রোটিন থাকতে পারে।
সুতরাং, শিশুদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য বাজারের প্রোটিন পাউডারের বিকল্প হিসেবে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর প্রোটিন পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।