ক্যান্সার চিকিৎসায় পথ্য ও বর্জন: কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস

ক্যান্সারকে একসময় মরণব্যাধি হিসেবে গণ্য করা হলেও, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন এই রোগের সফল চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে এবং বহু রোগী সুস্থ জীবন ফিরে পাচ্ছেন। তবে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের যখন কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, তখন শরীরে উচ্চ মাত্রার ওষুধ প্রয়োগের কারণে কিছু অনিবার্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর মধ্যে চুল পড়ে যাওয়া, চোখের নিচে কালো দাগ এবং খাবারে অরুচি অন্যতম।

ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি তার খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকাংশে কমানো সম্ভব এবং রোগীর শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা সাধারণভাবে টাটকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে পারেন। তবে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা এই সময়ে তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ক্যান্সার রোগীদের জন্য বর্জনীয় খাবার:

১. ফ্রিজে রাখা খাবার: ক্যান্সার রোগীদের জন্য দীর্ঘক্ষণ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা খাবার পরিহার করা উচিত। বাসি খাবারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা এই সময় রোগীর দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

২. প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার: খাদ্য সংরক্ষণে ফরমালিন বহু আগে নিষিদ্ধ হলেও, বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম প্রিজারভেটিভের ব্যবহার এখনও বিদ্যমান। এই ধরনের প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার ক্যান্সার রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলো শরীরে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

৩. ভাজা ও অতিরিক্ত মসলাদার খাবার: সিঙাড়া, সমুচা এবং অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার ক্যান্সার রোগীদের হজমের জন্য কঠিন হতে পারে। কেমোথেরাপির কারণে এমনিতেই অনেকের হজমক্ষমতা দুর্বল থাকে। তাই এই ধরনের খাবার পরিহার করাই শ্রেয়।

৪. বারবিকিউ বা পোড়া খাবার: সরাসরি আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা বারবিকিউ জাতীয় খাবারে কার্সিনোজেনিক উপাদান তৈরি হতে পারে, যা ক্যান্সার রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

ক্যান্সার রোগীদের জন্য উপকারী খাবার:

ক্যান্সার রোগীদের খাদ্যতালিকায় এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা সহজে হজমযোগ্য এবং শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে।

নরম ভাত ও ঠান্ডা তরকারি: কেমোথেরাপির সময় অনেক রোগীর হজমে সমস্যা হয়। তাই নরম ভাত খাওয়া উপকারী। এর সাথে তেল-মসলা কম দিয়ে রান্না করা ঠান্ডা তরকারি দেওয়া যেতে পারে।

সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল: ক্যান্সার রোগীদের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল থাকা উচিত। এই খাবারগুলো ভিটামিন, মিনারেলস, আয়রন এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণে সহায়ক।

বিট রুটের শরবত: শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে বিট রুটের শরবত অত্যন্ত উপকারী।

আনার: আনার একটি হিমোগ্লোবিন সমৃদ্ধ ফল, যা ক্যান্সার রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

কচুশাক, লালশাক ও ডাঁটাশাক: এই শাকগুলো আয়রনের ভালো উৎস। তবে এর সাথে অবশ্যই লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া উচিত, কারণ ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সাহায্য করে।

রসুন: প্রতিদিন একটি করে রসুন খাওয়া যেতে পারে। রসুন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের বিভিন্ন টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত জল পান: কেমোথেরাপির সময় শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করার জন্য রোগীকে প্রচুর পরিমাণে জল পান করানো উচিত।

স্যুপ: ক্যান্সার রোগীদের জন্য স্যুপ একটি হালকা ও পুষ্টিকর খাবার। টমেটো স্যুপে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও, সব ধরনের টাটকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।

ক্যান্সার একটি জটিল রোগ এবং এর চিকিৎসাকালীন সময়ে রোগীর সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করা এবং রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। তবে অবশ্যই রোগীর ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা তৈরি করা উচিত।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy