কোন আশ্চর্য শাকের কথা বলা হচ্ছে, তা হয়তো অনেকেই বুঝতে পারছেন না। আসলে, আজ আমরা আলোচনা করব ব্রাহ্মী শাক নিয়ে। হঠাৎ ব্রাহ্মী শাক কেন, ভাবছেন তো? বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথি ঘেঁটে এই শাকটি সম্পর্কে যা জানা যায়, তা সত্যিই বিস্ময়কর। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে সেই প্রাচীনকাল থেকেই এই শাকের ব্যবহার হয়ে আসছে। কারণ, ব্রাহ্মী শাক খেলে নাকি মস্তিষ্কের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, এর আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। সত্যিই কি তাই? একদমই! কারণ এই শাকের গুণাগুণকে আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই সুস্থ জীবনের সন্ধান পেতে এই প্রবন্ধটিতে একবার চোখ বুলানো জরুরি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ব্রাহ্মী শাক যোগ করলে সাধারণত যে উপকারিতাগুলো পাওয়া যায়, তা হল:
১. ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কয়েকটি ব্রাহ্মী শাকের পাতা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেলে ধীরে ধীরে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। তাই ব্রঙ্কাইটিস, বুকে কফ জমা এবং সাইনাসের মতো সমস্যা কমাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি দারুণ কাজে আসে। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, নিয়মিত এই শাকটি খাওয়া কতটা জরুরি!
২. বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্রাহ্মী শাকে উপস্থিত কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশের ক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, মনোযোগ বাড়াতেও এই শাকটি বিশেষ ভূমিকা নেয়। কারণ, মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশের ক্ষমতার ওপর মনোযোগের হ্রাস-বৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের মতো বুদ্ধিমান হতে চাইলে, নিয়মিত ব্রাহ্মী শাক খাওয়া আবশ্যক!
৩. রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে: অতিরিক্ত টেনশনের কারণে কি রক্তচাপ ওঠানামা করছে? তাহলে আজ থেকেই ব্রাহ্মী শাক খাওয়া শুরু করুন। কারণ, এই শাকটি রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণে যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে।
৪. ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি কমায়: এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানটি শরীর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিয়ে একদিকে যেমন ক্যান্সার কোষের জন্ম আটকায়, তেমনি সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো সুস্থ জীবন পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে ব্রাহ্মী শাকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা জরুরি।
৫. শরীরের ভেতরের প্রদাহ কমায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের কোনো অংশে কেটে গেলে ক্ষতস্থানে ব্রাহ্মী শাক বেটে লাগালে জ্বালা-যন্ত্রণা দ্রুত কমে যায়। শুধু তাই নয়, নিয়মিত এই শাকটি খেলে শরীরের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া প্রদাহও কমতে শুরু করে। ফলে কমে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।
৬. স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটির মাত্রা কমায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্রাহ্মী শাক খেলে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির জন্ম দেওয়া কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণ কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপ যেমন কমে, তেমনি মনের হারিয়ে যাওয়া আনন্দও ফিরে আসে। আজকের দিনে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে কর্মজীবী পর্যন্ত সকলেই নানা কারণে মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। ফলে ডিপ্রেশনের মতো মানসিক রোগের শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মী শাক কতটা উপকার করতে পারে, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: নিয়মিত এই শাকটি খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। আর একবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে কোনো ধরনের সংক্রমণ তো ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না, সেই সঙ্গে আরও নানা রোগ দূরে পালাতে বাধ্য হয়।
৮. অ্যালঝাইমার রোগ দূরে রাখে: ব্রাহ্মী শাকে উপস্থিত ব্যাকোসাইড নামক এক ধরনের বায়ো-কেমিক্যাল ব্রেন টিস্যুর ক্ষত সারিয়ে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন হ্রাস পায়, তেমনি কগনিটিভ ফাংশন কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে।
সুতরাং, রোগমুক্ত ও সুস্থ জীবন যাপনের জন্য ব্রাহ্মী শাককে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য। এর বহুমুখী উপকারিতা আপনার শরীর ও মনকে রাখবে সতেজ ও প্রাণবন্ত।