প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারের কারণে প্রাণ হারান লক্ষ লক্ষ মানুষ। এই ভয়ঙ্কর রোগের প্রকোপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে ফুসফুস অন্যতম, যেখানে ক্যান্সার খুব সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। চিকিৎসকরা একে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
দুঃখজনকভাবে, ফুসফুসের ক্যান্সার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে। সেই সময় রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। একটি মার্কিন গবেষণা অনুযায়ী, সেখানকার ৯০ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য সরাসরি ধূমপানকে দায়ী করা হয়েছে। তবে বাকি ১০ শতাংশ মানুষ, যারা কখনও ধূমপান করেননি, তারা কীভাবে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হন?
সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে সেই কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বে ধূমপান না করেও প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ মূলত চারটি প্রধান কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। আসুন, সেই কারণগুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক:
☞ প্রথম কারণ: পরোক্ষ ধূমপান (Secondhand Smoke): যারা নিজে ধূমপান না করেও ধূমপায়ীদের আশেপাশে থাকেন, তাদেরও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরোক্ষ ধোঁয়ার সংস্পর্শে এলেও তাদের শরীরে ধূমপায়ীদের মতোই ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ বাসা বাঁধতে পারে। তাই ধূমপান করেন না এমন ব্যক্তিদেরও ধূমপান এড়িয়ে চলা উচিত।
☞ দ্বিতীয় কারণ: বংশগত বা জিনগত কারণ: বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপান না করেও পারিবারিক ইতিহাস বা জিনগত কারণে বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি পরিবারের কোনো সদস্য আগে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবহেলা না করে মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। জিনগত প্রবণতা এই রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
☞ তৃতীয় কারণ: কলকারখানার দূষণ: যারা বিভিন্ন কলকারখানায় কাজ করেন, তাদের ফুসফুসে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। কলকারখানায় কাজের সময় নিকেল, অ্যাসবেস্টোস, আর্সেনিক, ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক মৌলগুলির সংস্পর্শে আসার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। কাজের সময় সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
☞ চতুর্থ কারণ: রেডনের সংস্পর্শ: যারা মাটির গভীরে খনি বা এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত থাকেন, তাদের শরীরে রেডন নামক তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। এই রেডনের সংস্পর্শে আসার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এই ধরনের পেশায় কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
সুতরাং, ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলেও, এই নীরব ঘাতক অন্যান্য বিভিন্ন কারণেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই যারা ধূমপান করেন না, তাদেরও উপরোক্ত কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।